বরিশাল আওয়ামী লীগ

অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ সাদিক আবদুল্লাহর

আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। নগরের রাজনীতিতে আধিপত্য ধরে রাখতে এবার তিনি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে মনোযোগ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে দলে সৃষ্ট বিভেদ বাড়ছে বলে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকেরা।

সবশেষ গত মঙ্গলবার বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। সেখানে নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহর অনুসারীরা বাদ পড়েছেন। শীর্ষ দুটি পদই এখন সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীদের দখলে। এর মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীদের ঢোকানোর চেষ্টা চলছে। এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে মহানগর ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির স্বাক্ষরে নগরের ৩০টি ওয়ার্ড ও বিভিন্ন কলেজে সাদিক অনুসারীদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভাজন ক্রমেই উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।

এবারের সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি সাদিক আবদুল্লাহ। বিপরীতে মনোনয়ন পাওয়া তাঁরই ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ১২ জুন অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের সাদিকবিরোধী শিবির সক্রিয় হতে শুরু করে। সাদিক আবদুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নগর আওয়ামী লীগের পুরো কমিটিই তাঁর নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া জেলা সভাপতি তাঁর বাবা বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। জেলা কমিটির নেতারাও সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে। তবে নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহর নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কোনও পদ-পদবি নেই।

মহানগর শ্রমিক লীগের নতুন কমিটিতে স্থান পাননি আগের কমিটির সভাপতি আফতাব হোসেন। তাঁর বদলে সভাপতি করা হয়েছে সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী পরিমল চন্দ্র দাসকে। তিনি আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক। মহানগর ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ ওরফে মান্না পেয়েছেন সাধারণ সম্পাদকের পদ। রইস আহম্মেদ ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারীদের ওপর গত ১৩ মে হামলার অভিযোগ ওঠে। এতে রইস আহম্মেদ ও তাঁর ১২ সহযোগীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর ১৬ মে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নূর কুতুব আলম ও সাধারণ সম্পাদক কে এম আযম খসরু গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। সেখান বলা হয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ও বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর এবং সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের নতুন কমিটি অনুমোদন প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে আগামী এক মাসের মধ্যে ঘোষিত ২৮ সদস্যের এই কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

তবে এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন সদ্য সাবেক সভাপতি আফতাব হোসেন। তিনি আবুল খায়ের আবদুল্লাহর অনুসারী। আফতাব হোসেন গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কাউকে না জানিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কখন বিলুপ্ত করা হয়েছে, কারা নতুন কমিটি জমা দিয়েছে, তা–ও তিনি জানেন না। মূলত দলের মধ্যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে।
আফতাব হোসেন বলেন, ‘আমরা অব্যশই এর প্রতিবাদ করব। সাধারণ শ্রমিকেরা বরিশালে এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। এই কমিটি আমরা কেউ মানি না। আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করব।’

তবে নতুন কমিটির সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, আফতাব হোসেন দলীয় সভা ও কর্মকাণ্ডে আসতেন না। সম্প্রতি তিনি নিষ্ক্রিয় হয়েছিলেন। এতে সংগঠন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহর সুপারিশে এই কমিটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, রইস আহম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করায় সংগঠন এখন শক্তিশালী হবে।

এদিকে গত বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ডে কমিটি করার জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছে। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাঠানো হয়।

এর আগে ১০ জুলাই থেকে বরিশাল বিএম কলেজ ও নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে বিলুপ্ত হওয়া নগর কমিটির নামে পেছনের তারিখ দেখিয়ে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এসব কমিটি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রকাশ করার পর সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অস্থিরতা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এই উত্তেজনার জেরে বরিশাল বিএম কলেজে নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়েরের অনুসারীরাও পাল্টা কমিটি দিয়েছিল।

বিএম কলেজ ছাত্র কর্মপরিষদের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী ছাত্রলীগের নেতারা ভুয়া কমিটি দিচ্ছেন। বিলুপ্ত হওয়ার আগে এসব কমিটি গঠন করেছেন এমন দাবি করে এসব কমিটি প্রকাশ করা হচ্ছে।

অবশ্য বিলুপ্ত হওয়া মহানগর কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম বলেন, মহানগর কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার আগে নগরের ৩০টি ওয়ার্ড এবং সব কলেজ ইউনিট কমিটি গঠন সম্পন্ন করেছিলেন। তখন ১ থেকে ৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপর সিটি নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় বিরোধে বাকি কমিটিগুলো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। মাইনুল দাবি করেন, প্রকাশ না করা কমিটিগুলো এখন তাঁরা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন।