দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। তবে দলের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ১৬ নেতাকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু ওই নেতাদের পক্ষে কাজ করছেন দলের অনেক কর্মী ও সমর্থক। তাঁরা নির্বাচনের মাঠে সক্রিয়। তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে বিএনপি।
এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী বলেন, কর্মীদের সম্পৃক্ত না হতে ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল পর্যায়ের ব্যক্তিদের মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে। নির্বাচনের প্রচারে দেখা গেলে তাঁদের ছবি তোলা হবে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে কোনো টিম বা কমিটি গঠন করা হয়নি।
গত ২১ মে রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। এরপরও ১৬ নেতার কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি বরং সংরক্ষিত নারী আসনের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।
অবশেষে ৭ জুন তাঁদের আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কারের পর ভোটের মাঠে কোনো প্রভাব পড়েছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও এবারের প্রার্থী আনোয়ারুল আযিম বলেন, এই ঘোষণার পরে নির্বাচনের মাঠে প্রভাব পড়েনি। যাঁরা তাঁকে গত চার নির্বাচনে ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন, তাঁরা এবারও ভোট দিতে চাচ্ছেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর নির্বাচনটি দলীয় হয় না। সব দলের লোকের ভোটেই তিনি নির্বাচিত হন।
এ ব্যাপারে যুবদলের এক নেতা বলেন, ‘১৬ জন নেতা-কর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করা হলো। চিঠির ভাষা খুব কঠিন। চিঠির ভাষা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছেন। বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন। আমরা ভোটে গেলাম না কিন্তু ব্যাপকসংখ্যক ভোটার যদি বহুল পরিমাণে ভোট দিতে যান, সে ক্ষেত্রে ভোট বর্জনের অর্থ ও অর্জন কী? আমাদের দাবির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কি প্রশ্ন উঠবে না? ভোট বর্জন ও বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েই আমাদের কাজ শেষ? ঘোষণা দিয়ে ঘরে বসে থাকব? দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জনগণের নাভিশ্বাস ও কর্মহীন মানুষ কয়টি টাকার জন্য প্রার্থীদের স্থায়ী ও অস্থায়ী কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছে। রাস্তায় হাঁটলেই কানে আসে...কী রে মিছিলে গিয়েছিলি? কত দিল? ৩০০ টাকা, কিন্তু মেয়রের মিছিলও করিয়ে নিল। আলাদা টাকা দিল না।...কী করবি ওরা-ওরাই তো সব। আর একটু বেশি দিলে ভালো হতো তাই না?’
আরেক স্থানে কিছু যুবক নিজেরা গল্প করছেন, ‘পোস্টার টাঙাতে টাঙাতে সাহেববাজার হয়ে বড়কুঠির ওপাশটাও ঝুলিয়েছি, কিন্তু কয় টাকা দিল? আরেকজন বলছে যে কটা দিন হয়, করে নে, এটাই কে দেয়?’
এক নারীকে বলতে শোনা গেল, ‘ছেলে আমার ছোট। আমরা বিএনপি করি, সবাই মিছিল করছে টাকা পাচ্ছে, আনন্দ আড্ডা দিচ্ছে, আমি বাধা দিইনি। এ বয়সে ওরা এমন তো করবেই তাই না গো?’
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ভোট বর্জন করেছে, এটা তো লুকানো বিষয় না, তো বর্জনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বোঝাতে হবে না? নেতা–কর্মীদের ব্যস্ত ও দল সম্পৃক্ত রাখতে হবে না? কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আখড়া। অলস কর্মীরা বিভিন্ন প্রলোভনে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে না? মহানগর নেতাদের কাজ কী? ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সংগঠিত হয়ে থাকার অনেক কর্মসূচি দেওয়া যায়। মৃত নেতাদের নামে দোয়া, কুলখানি ইত্যাদি।
এই বর্জিত নির্বাচনের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সিটি করপোরেশন এলাকায় করতে দেওয়া হয়নি। সিটির বাইরে পালনের পরও অসংখ্য নেতা–কর্মীর নামে ১৫ থানায় ২৩টি হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়ে আটক আছে ২৫ নেতা-কর্মী। তারা যদি আইনবহির্ভূত কাজ করে মামলা ও গ্রেপ্তার করতে পারে আর সেই নির্বাচনের জন্য বিএনপির নিপীড়িত কর্মীর অবস্থা ব্যাখ্যা করতে পারবে না? দুর্নীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম, বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ বিভিন্ন জাতীয় সমস্যার প্রচারপত্র বিলির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গণসচেতনতা করতে পারে বিএনপি।
এ ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘এটা তাঁদের জীবন-মরণ আন্দোলন। তাঁদের কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মী-সমর্থকদের ওপর নজরদারির জন্য আলাদা কোনো কমিটি করে দেওয়া হয়নি। যাঁরা ওয়ার্ডের নেতা রয়েছেন, তাঁদের লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ নির্বাচনী গণসংযোগে গেলে মুঠোফোনে তাঁদের ছবি তুলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।