অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার বহর অনেক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। আজ সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর আগমুহূর্তে স্মৃতিসৌধ চত্বরে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাসের মূল্যায়ন জানতে চাওয়া হলে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘এই সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার ছিল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারে, সেটির এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি আমরা দেখি না। আহত-নিহত ব্যক্তিদের তালিকা করে তাঁদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের সেই কাজেও দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সিন্ডিকেট, সেগুলো ভাঙতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সেটাও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। এগুলো অনেকগুলো ব্যর্থতা আছে।’
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘তবে সংস্কারের জন্য কয়েকটি কমিটি করেছে, সে কমিটিগুলোর সুপারিশ ডিসেম্বর বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেওয়ার কথা। সেগুলো দিলে দেখা যাক, তারপর আলাপ–আলোচনা। সে জন্য আমরা আগেই বলছিলাম, কী সংস্কার করছেন, কতটুকু করছেন, সেইটা আগে বলেন। তাহলে আমরা বলতে পারব যে না, আপনার এইগুলো এত বেশি করার দরকার নেই, এইটা এইটা করেন। নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন, সেটুকু করেন। সে জন্য বলছি, এই সরকারের ব্যর্থতার অনেক বহর আছে।’বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘৫৩ বছরের জঞ্জাল, সেটি ৪ মাসে সরানো সম্ভব নয়। তারপরও হয় না যে ভোরের পুব আকাশ দেখলে মানুষ বুঝতে পারে, দিনটা কেমন যাবে। সে জন্য সেদিকে তাদের যে মনোযোগ, সেটি খুব কম, আমরা সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
২৪–এর পরাজিত শক্তি যেন আর পুনর্বাসিত না হয়, এমন আকাঙ্ক্ষার কথা জানান বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘গত ৫৩ বছর যারা দেশ শাসন করেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের যে প্রকৃত চেতনা, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার—এর বিপরীতে গিয়ে তারা দেশ পরিচালনা করেছে। যে কারণেই আমাদের দেশের এ হাল হয়েছে। ৫৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে ২০২৪ সালে ছাত্র-শ্রমিক জনতার গণ–অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। আমরা বলতে চাই, ৭১ সালে যারা পরাজিত হয়েছিল, জনগণ যাদের পরাজিত করেছিল, পরবর্তীকালে শাসকশ্রেণি তাদের পুনর্বাসিত করেছে। ৯০ সালে গণ–অভ্যুত্থানে জনগণ যাদের পরাজিত করেছিল, তাদেরকেও আবার শাসকশ্রেণি পুনর্বাসিত করেছে। আমাদের আকাঙ্ক্ষা থাকবে, ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে যাদের পরাজিত করল জনগণ, সেই শক্তি যেন আর পুনর্বাসিত না হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ২৪–এর গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় যাতে সাম্যের বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, এটাই হোক এই বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।’