ফেনীতে অপহরণের চার দিন পর ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয় স্কুলছাত্র আহনাফের মরদেহ
ফেনীতে অপহরণের চার দিন পর ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়  স্কুলছাত্র আহনাফের মরদেহ

ফেনীতে স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার

হত্যার পর স্কুলব্যাগে পাথর দিয়ে ডোবায় ফেলা হয় লাশ

ফেনীতে অপহরণের চার দিন পর ডোবা থেকে এক স্কুলশিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনী সদর উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ রেললাইনের পাশের ডোবা থেকে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, হত্যার পর শিক্ষার্থীর স্কুলব্যাগে পাথর দিয়ে লাশ ফেলা হয়েছিল ডোবায়।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম আহনাফ আল মাঈন ওরফে নাশিত (১০)। সে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের আনসার আলী ফকির বাড়ির মাঈন উদ্দিনের ছোট ছেলে। পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আহনাফ ফেনী পৌরসভার একাডেমি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল। সে ফেনী গ্রামার স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত।

নিহত শিশুর স্বজন ও পুলিশ জানায়, ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শহরের একাডেমি এলাকার আতিকুল আলম সড়কের লাইট হাউসে কোচিং শেষ করে আহনাফ। এরপর স্থানীয় একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যায় সে। নামাজ শেষ বাড়ি ফেরার পথে তাকে অপহরণ করে দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জুসের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে অপহরণকারীরা। সেদিন রাতেই অপহরণকারীরা আহনাফের বাবা মাঈন উদ্দিনের কাছে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

নিহত আহনাফের বাবা মাঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর রাত একটার দিকে একটি অচেনা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ছেলের ছবি পাঠানো হয়। মুক্তিপণ চাওয়া হয় ১২ লাখ টাকা। মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার জন্য রাজিও হয়েছিলাম। তারপরও ছেলেটাকে প্রাণে মেরে ফেলা হলো। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

আটক হলেন যাঁরা

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার ঘটনায় তিন তরুণকে গতকাল বুধবার রাতে আটক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন আশরাফ হোসেন (২০), মো. মোবারক হোসেন (২০) ও ওমর ফারুক (২০)। আশরাফ ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের নিজপানুয়া গ্রামের ইকবাল হোসেন চৌধুরীর ছেলে। তিনি শহরের সালাহ উদ্দিন মোড় এলাকায় থাকতেন। পাশাপাশি তিনি ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। মোবারক ফেনী পৌরসভার বারাহিপুর এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে। পেশায় তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। আর ওমর লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানার কামালপুর এলাকার দুদুমিয়া বাড়ির মো. শাহ আলমের ছেলে।

ব্যাগে পাথর ঢুকিয়ে মরদেহ ফেলা হয় ডোবায়

আজ বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান। ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, নিহত শিক্ষার্থী আহনাফের বড় ভাই নিশাতের সঙ্গে পূর্বপরিচয় ছিল আসামি আশরাফ হোসেনের। সে সুযোগে আহনাফকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করা হয়। মুক্তিপণের টাকা দিতে দেরি ও লোকজন জানাজানি হওয়ার ভয়ে আহনাফকে শ্বাসরোধে হত্যা করে রেললাইনের পাশে ডোবায় ফেলে দেন অপহরণকারীরা। লাশ ডুবিয়ে রাখতে আহনাফের সঙ্গে থাকা স্কুলব্যাগে পাথর ঢোকানো হয়। তারপর ব্যাগটি শরীরের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করে তাঁদের গ্রেপ্তার ও লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঘটনার পর আশরাফকে সন্দেহ হয় আহনাফের বাবার। অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফ হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে ডোবা থেকে আহনাফের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় অন্য দুই আসামিকেও।

জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ দাফনের জন্য আজ সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আসামিদের শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।