পেশায় শিক্ষক সালামত উল্লাহ গত বছর কোরবানির গরু কিনেছিলেন ৫৮ হাজার টাকায়। এবার হাটে হাটে ঘুরে এখনো পছন্দের গরু মেলাতে পারেননি তিনি। গতবারের তুলনায় এবার বাজেটও বাড়িয়েছেন ১০ হাজার টাকা। শেষবেলায় দাম কমতে পারে, এমন আশায় আছেন তিনি।
আজ শনিবার নগরের সাগরিকা পশুর হাটে সালামত উল্লাহর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন ঘড়ির কাঁটা বেলা তিনটার ঘরে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১২ বছর বয়সী ছেলে আরাফ উল্লাহ। জানান, বাবা-ছেলে দুপুর ১২টা থেকে বাজারে ঘুরছেন। দুটি গরু পছন্দ হয়েছিল। একটি লালরঙা। বিক্রেতা দাম চেয়েছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে দাম বেশি মনে হওয়ায় কথা এগোয়নি। আরেকটি সাদা রঙের গরু পছন্দ হলেও ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দাম হাঁকেন বিক্রেতা।
সালামত উল্লাহ মনে করেন, লালরঙা গরুটির দাম সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা হতে পারে। আর সাদা রঙের গরুটির দামও এ রকম। কিন্তু বিক্রেতা দরাদরিতে আগ্রহ প্রকাশ না করায় কিনতে পারেননি।
বাজেটের প্রসঙ্গে টেনে সালামত উল্লাহ বলেন, সীমিত আয়ের চাকরি করেন তিনি। তবু গতবারের চেয়ে ১০ হাজার টাকা বাজেট বাড়িয়েছেন। এর বেশি বাড়ানোর সামর্থ্য নেই। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় গরু মেলাতে না পারলে ছাগল কেনার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
সাগরিকা পশুর হাটে সালামত উল্লাহর মতো আরও ১০ জন কোরবানিদাতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁদের মধ্যে দুজন মাঝারি আকারের গরু কিনতে পেরেছেন। আটজনই গরু কিনতে পারেননি। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, শুরুতেই আকাশ ছোঁয়া দাম হাঁকা হচ্ছে। দরাদরি করার সময় পাওয়া যাচ্ছে না। এক লাখ টাকার গরুর দ্বিগুণ দাম বলছেন বিক্রেতারা। ফলে আর কিছু বলার থাকছে না।
এক সপ্তাহ আগে মাগুরা থেকে ১০টি গরু নিয়ে সাগরিকায় এসেছেন মল্লিক মিয়া। এর মধ্যে চারটি বিক্রি হয়েছে। ছয়টি গরু এখনো রয়েছে। বাড়তি দাম চাওয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, গরু লালন–পালনে খরচ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা বাড়তি বলে মনে হচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি বাড়েনি।
আরেক বিক্রেতা আবদুর রহমান মাঝারি আকারের ছয়টি গরু নিয়ে এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। চারটি এখনো বিক্রি হয়নি। এ বিক্রেতা বলেন, দেড় থেকে দুই লাখ টাকা দামের গরু এনেছেন তিনি। এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার ও ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় দুটি গরু বিক্রি করেছেন তিনি। কিছুটা কম দামে বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করেন এ বিক্রেতা।
ছাগলের দামও চড়া
মোহাম্মদ ইলিয়াছ রাজশাহী থেকে ২০টি ছাগল নিয়ে এসেছেন। একেকটির দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে চাইছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার তাঁর সঙ্গে দরাদরি করছিলেন বহদ্দারহাটের বাসিন্দা খুচরা ব্যবসায়ী নাইম উদ্দিন। ইলিয়াছ একটি ছাগলের দাম হাঁকেন ২৫ হাজার টাকায়। পরে ১৭ হাজারে রফা করেন তাঁরা। কেনার এক ফাঁকে নাইম বলেন, দাম কিছুটা বেশি মনে হয়েছে তাঁর। তবে পছন্দ হওয়ার কারণে কিনে নিয়েছেন। হার-জিতের বিষয়ে ভাবছেন না।
মোহাম্মদ ইব্রাহিম নামের আরেক বিক্রেতা এসেছেন খাগড়াছড়ি থেকে। তাঁর কাছে ছিল ২৫টি ছাগল। ইব্রাহিম জানান, ২৫টির মধ্যে ১৬টি বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলো আজকের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাওয়ার আশা করছেন তিনি। সাগরিকা হাটের ছাগল বিক্রেতারা বলছেন, শেষ সময়ে এসে ছাগলের বিক্রি বেড়েছে। অনেক ক্রেতা গরু কিনতে না পেরে ছাগল কিনছেন। তবে ছাগলের দামও কিছুটা বেশি পড়ছে।
সাগরিকা পশুর বাজারের ইজারাদার শিবু দাশ প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল রয়েছে। গতকাল বিক্রিও ভালো হয়েছে। ক্রেতারা পছন্দমতো গরু কিনতে পারছেন। তবে আগামীকাল রোববার বিক্রি আরও বাড়তে পারে।