অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমানের অপসারণ দাবিতে প্রশিক্ষণার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন শুরু করেছেন। আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। একই দাবিতে আগামীকাল সোমবার সকালে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রশিক্ষণার্থীরা।
প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য ১০ মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স চলমান রয়েছে। এই কোর্সের জন্য ছয় মাস আবাসিক ও চার মাস অনাবাসিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। প্রতি ব্যাচে ১৫০ জন করে প্রশিক্ষণ নেন। শুরুতে প্রাতিষ্ঠানিক পোশাকের মধ্যে নারীদের শাড়ি ও পুরুষদের শার্ট-প্যান্ট এবং সকালে প্যারেডের জন্য নারী-পুরুষ উভয়কেই জুতা-টি শার্ট-ট্রাউজার কিনতে হয়। এসব পোশাক কেনার জন্য সরকার জনপ্রতি দুই হাজার টাকা দিলেও পাঁচ হাজারের বেশি টাকা প্রশিক্ষণার্থীদের খরচ হয়।
প্রশিক্ষণার্থীরা অভিযোগ করেন, ওই পোশাকের দাম যাচাই করে নিজেদের ইচ্ছেমতো দোকান থেকে কেনার সুযোগ নেই। পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ারের পছন্দের দোকান থেকে এসব পোশাক কিনতে বাধ্য করা হয়। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে পিটিআই সুপার কমিশন নেন।
যশোর কালেক্টরেট মার্কেটের বলাকা টেইলার্স থেকে পুরুষদের শার্ট প্যান্ট ও মেয়েদের শাড়ি নিতে বাধ্য করা হয় বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। বলাকা টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী এনামুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, মিষ্টি খাওয়ার জন্য পুরুষদের শার্ট-প্যান্টপ্রতি পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমানকে ১০০ টাকা করে দিতে হয়। পাঁচ বছর ধরে তিনি পিটিআই প্রশিক্ষণার্থীদের পোশাক তৈরি করে দিচ্ছেন বলে জানান তিনি। সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমান যশোর পিটিআইতে চার বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে প্রশিক্ষণার্থীরা মাসিক তিন হাজার টাকা করে সরকারি ভাতা পান। চলতি মাসের টাকা পরের মাসে দেওয়া হয়। কিন্তু জেলা অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিস ‘ম্যানেজ করার’ কথা বলে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চ্যানেলে ঘুষের টাকা না দিলে এজি অফিস (জেলা অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স) থেকে কোনো বিল পাস করে না। ২০০ টাকা করে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে নিয়ে এজি অফিসে ঘুষ দিতে হয়েছে।’ জেলা অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমানের দাবি, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। বিল আনলে পাস করে দেন তিনি।
প্রশিক্ষণার্থীরা বলছেন, আবাসিক হলে থাকার জন্য প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে মাসে ৫০০ টাকা করে সংস্থাপন চার্জ নেওয়া হয়। আবাসিক হলে না থাকলেও এই টাকা দিতে হয়। ব্যাচপ্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা করে ওঠে। দুটি আবাসিক হলের আয়ার বেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এই টাকা তোলা হয়। অথচ এই টাকা গ্রহণের কোনো রসিদ দেওয়া হয় না।
এ বিষয়ে সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমান বলেন, ‘সংস্থাপন চার্জের টাকা প্রশিক্ষণার্থীরা উত্তোলন করেন। আবার তাঁদের মাধ্যমেই খরচ হয়। হোস্টেল সুপাররা বিষয়টি দেখেন। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, বিষয়টি শুনে তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বিষয়টি দেখছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমি পিটিআই ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের অভিযোগগুলো শুনেছি। তাঁদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে শিক্ষাসচিব ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দেব।’