এক একর জায়গায় খনন করা একটি পুকুর। সেই পুকুরপাড়ের পরিত্যক্ত পলি মাটিতে রয়েছে বলসুন্দরী জাতের প্রায় ১০০ কুলগাছ। ইউটিউবে ভিডিও দেখে শখের বশে ছয় বছর আগে এসব গাছের চারা রোপণ করেন প্রবাসী আনোয়ারুল হক। এখন সেই শখের কুলবাগান পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক প্রকল্পে। প্রতি মৌসুমে কুল বিক্রি করেই আনোয়ারুলের আয় হচ্ছে প্রায় ৯ লাখ টাকা।
আনোয়ারুল হক চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া আলী সিকদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। জীবিকার তাগিদে তিনি বর্তমানে রয়েছেন আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে। তাঁর কুলবাগানটি অবস্থিত উপজেলার পদুয়ার ডোয়ার আলী সিকদারপাড়া এলাকায়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারুলরা ছয় ভাই। এর মধ্যে তিনজনই প্রবাসী। ২০১৮ সালের শেষের দিকে ছুটিতে দেশে এসে পারিবারিক পুকুরটির পাড়ে ১০০টি বলসুন্দরী কুলগাছের চারা রোপণ করেন আনোয়ারুল। নওগাঁ জেলা থেকে এসব চারা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি চারা কিনতে খরচ হয় ৩৫ টাকা। চারা ক্রয়, ভূমি উন্নয়ন ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ প্রথম বছরে ব্যয় হয় ৬০ হাজার টাকা।
এক বছর পর থেকে গাছগুলো ফল দেওয়া শুরু করে। প্রথম দিকে উৎপাদন কম হতো। সেগুলো পরিবারের চাহিদা মেটাত এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের বাড়িতে উপহার হিসেবে পাঠানো হতো। ২০২২ সাল থেকে আনোয়ারুলদের বাগানের কুল বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু হয়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি, এই দুই মাসে প্রতিদিন গড়ে আড়াই মণ কুল বিক্রি হয়। প্রতি কেজির দাম ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এক মৌসুমে কুল বিক্রি করে আয় হয় প্রায় ৯ লাখ টাকা। গাছগুলো পুকুরপাড়ে হওয়ায় সেচ দিতেও সুবিধা, খরচ কম হয় বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরটির চারপাশে সারি সারি কুলগাছ। ফলের ভারে গাছগুলোর শাখা-প্রশাখা মাটিতে নুইয়ে পড়ছে। পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গাছগুলো জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ক্রেতাদের জন্য গাছ থেকে পাকা কুল ছিঁড়ছেন আনোয়ারুলের ভাই মুমিনুল হক। বাগানের ভেতর আবু তৈয়ব নামের এক শ্রমিকও কাজ করছেন। বাগানে কয়েকজন স্থানীয় খুচরা ক্রেতাকেও দেখা যায়।
প্রথম আলোকে মুমিনুল বলেন, ‘প্রতিবার কুল বিক্রির মৌসুমে আমরা ছয় ভাইয়ের কেউ না কেউ ছুটিতে থাকি। যিনি ছুটিতে থাকেন, তিনি বাগান দেখাশোনা করেন। সুমিষ্ট হওয়ায় আশপাশের এলাকায় সাধারণ ক্রেতাদের কাছে আমাদের কুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কষ্ট করে বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। ক্রেতারা বাগানে এসে কুল কিনে নেন। অনেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের কাছে পাঠান।’
মুমিনুল আরও বলেন, ‘শখের বশে করা হলেও বর্তমানে এটি লাভজনক কৃষি প্রকল্প। এটি থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে গত বছর বাড়ির পাশে আরও ২৪০ শতক পরিত্যক্ত জায়গায় আমরা আরও ৫০০টি বলসুন্দরী কুলগাছের চারা রোপণ করেছি। বর্তমানে সেখান থেকেও ফল উৎপাদন শুরু হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, আমরা ভবিষ্যতে কুলসহ বিভিন্ন কৃষি প্রকল্প আরও বিস্তৃত করব। এতে আমাদের জীবিকার জন্য প্রবাসে জীবনযাপন করতে হবে না।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী শফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন চাষিদের জন্য প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে কুলের জাত বিবেচনা করা। বাণিজ্যিকভাবে অনেক কুলের চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে এলাকা অনুযায়ী বাজারে যে জাতের কুলের সর্বাধিক চাহিদা রয়েছে এবং ফলন বেশি হয়, সেই কুল চাষ করা ভালো। মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় লোহাগাড়ার বাজারে বলসুন্দরী কুলের চাহিদা অনেক বেশি। বর্তমানে উপজেলায় এ জাতের ১৫টি বাগান গড়ে উঠেছে। সব কটির অবস্থা বেশ ভালো। এখানকার আবহাওয়া কুল চাষের জন্য উপযোগী। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কেউ স্বল্প পুঁজি, কম পরিশ্রম ও অল্প সময়ে কুল চাষ করে লাভবান হতে পারেন।