রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার)। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই কোথাও হেঁটে হেঁটে, আবার কোথাও গাড়িতে যাচ্ছেন। ভোটাররাও তাঁকে পেয়ে ঘিরে ধরছেন।
আজ বুধবার সকালে মাহিয়া মাহি রাজশাহী সার্কিট হাউসে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সেখানে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন। রাজশাহীর ছয়টি আসনের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের এই সভায় অংশ নেন। ওই সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা, নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে সভা শেষে বের হয়ে আসার পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন মাহিয়া মাহি। তিনি নির্বাচন কমিশনকে কী কী বিষয় বলেছেন, তা তুলে ধরেন। এ সময় সাংবাদিকেরা তাঁকে ঘিরে ধরে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মাহি জনপ্রতিনিধি হলে তাঁর অভিনয়ের কী হবে। তিনি অভিনয়ে সময় দেবেন নাকি রাজনীতিতে। কোনটাকে গুরুত্ব দেবেন। এ ব্যাপারে মাহি বলেন, ‘অভিনয়টা আমার রুটি। এই অভিনয়ের জন্যই আজকে আপনারা এখানে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। সেই পরিচিতি আমাকে ইন্ডাস্ট্রি দিয়েছে। কিন্তু অভিনয় তো অভিনয়ের জায়গায় থাকবে। আমি মানুষের সেবা করব। রাজনীতির মূলনীতি মানুষের সেবা করা। সেই সেবাটা করব। আমার আয়টা হবে অভিনয় থেকে। আমার তো কাজ করতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনে মাহি তাঁর এলাকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। তাঁকে নির্বাচন কমিশন আশ্বস্ত করে বলেছে, যদি কোনো প্রার্থী কোনোরকম ঝামেলা করেন। ভোট নিয়ে কারচুপির চেষ্টা পর্যন্ত করেন। এ রকম যদি হয় তাহলে ওই প্রার্থী জিতে গেলেও এমন অবস্থাতে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। তাঁরা খুব কঠোরভাবে সবাইকে সতর্ক করেছেন। আশ্বস্ত করেছেন, যেকোনো সাধারণ ভোটার যদি প্রশাসনকে অভিযোগ করে জানান যে তাঁকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যত বড় ক্ষমতাসীন লোকই হোক না কেন, দলই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেবেন না। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু ভোটারদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব তাঁদের। কার কত জনপ্রিয়তা, সেই জনপ্রিয়তা দিয়ে আসলে ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে হবে।
মাহিয়া মাহি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের কথার সঙ্গে এখন পর্যন্ত মাঠের মিল আছে। তবে নির্বাচনের আগের দিন কোনো প্রার্থী এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি যাতে না করতে পারেন, যাতে ভোটাররা আতঙ্কে থাকেন, সেটার জন্য অনুরোধ করেছেন। এই আসন যাতে নির্বাচন কমিশন নজরে রাখে। ভোটাররা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। সেই অনুরোধ তিনি করেছেন।
গত কয়েক দিনের মাঠের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকার ভোটাররা খুবই সাধারণ। তাঁরা খুবই সহজ–সরল। তাঁরা আসলে চান, তাঁদের গায়ে হাত দিয়ে দুটো কথা বলা হোক। সেটুকুর জন্যই তাঁরা আসলে পরিবর্তন চান। এই ভালোবাসা তাঁরা চান। তাঁরা বিগত দিনে এই ভালোবাসা পাননি। এখানকার শিক্ষকেরা একটা পরিবর্তন চান, তাঁরা সম্মান চান। শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকি, তাঁদের যদি তুই–তুকারি করি, তাঁদের কান ধরে ওঠবস করাই। তাহলে তো সমস্যা। তানোর-গোদাগাড়ীর মানুষ আসলে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে চান। তাঁরা ভয়ে থাকতে চান না। মাসে একবার হলেও জনপ্রতিনিধি তাঁদের পাশে আসুক। তাঁদের সমস্যাগুলো শুনুক।’
কোনো হুমকির ঘটনা আছে কি না। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ বাধা দেবে, আমি সেটার কাউন্টার দেব। আমাকে কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি। টুকটাক বাধা আসবেই। তিনি যখন যেভাবে প্রশাসনকে বলেছেন, তাঁরা বিদ্যুৎ গতিতে শতভাগ এসেছেন। আমি শতভাগ নিশ্চিত যে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে যাচ্ছে।’
কামারগাঁ ইউনিয়নে নির্বাচনী কার্যালয় না করতে পারার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘পারিনি। কারণ হচ্ছে এখানকার স্থানীয় মানুষ বর্তমান সংসদ সদস্যকে ভয় পান। সেটা তো আসলে প্রশাসনও কিছু করতে পারবে না। এখানে মানুষকে সাহসী হতে হবে। এই নির্বাচনের পর ভোটারদের চিন্তাভাবনাই পরিবর্তন হয়ে যাবে।’
গণমাধ্যম না থাকলে পুরো বিষয়টি অন্য রকম হতে পারত বলে তিনি মনে করেন। এখন পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মাহিয়া মাহি। কিন্তু দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তবে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের গরমিল থাকায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিলের পর প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। রাজশাহী-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। তিনি ও মাহি ছাড়াও আরও সাতজন প্রার্থী রয়েছেন এ আসনে।