ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের তিন সংসদ সদস্যের সঙ্গে পাশাপাশি এক মঞ্চে উপস্থিত হন বিএনপির দলছুট নেতা সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রায় ৩০ সেকেন্ড তাঁর মাইক্রোফোন ধরে রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। শেষে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে বক্তব্য শেষ করেন আবদুস সাত্তার।
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের আধুনিকায়ন করেন সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিমের নেতৃত্বে আগের কার্যকরী কমিটির সদস্যরা। রোববার প্রেসক্লাবের নতুন অভিযাত্রায় শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রেসক্লাব।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রেসক্লাবে যান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি ফিতা কেটে প্রেসক্লাবের উদ্বোধন করেন। দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত প্রেসক্লাব-সংলগ্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ডরমিটরিতে আলোচনা সভায় অংশ নেন অতিথিরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরীর আগে বক্তব্য দেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি মুখমণ্ডল থেকে সামান্য দূরে মাইক্রোফোন ধরেন। এ জন্য তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল না। অসুস্থতার কারণে সে সময় তাঁর শরীর কাঁপছিল। তখন পাশে বসা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজ হাতে তাঁর মাইক্রোফোন ধরে মুখের কাছে নিয়ে যান। প্রায় ৩০ সেকেন্ড আবদুস সাত্তারের মাইক্রোফোন ধরে রাখেন তিনি।
আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বলেন, ‘উপস্থিত প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রীসহ যাঁরা উপস্থিত হয়েছেন, সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে আগেও গিয়েছি। আপনারা যত কিছুই বলেন, আমার দৃষ্টিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব আস্তে আস্তে অনেক উন্নত হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে। আমার শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যতটুকু পারি, আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।’ তিনি বলেন, ‘আপনাদের দাবিদাওয়া দেখার মালিক প্রধান অতিথি। ওনার সঙ্গেও থাকব, ওনার পাশে থাকব। যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করব। এই বলে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই আনিসুল হক বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। তিনি বয়োবৃদ্ধ। কিন্তু জীবনের শেষে এসে বুঝতে পেরেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন আওয়ামী লীগ দিয়েই হয়। সে জন্যই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘এখন একটা দাবি উঠেছে, কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট। আমরা একটা কথা বলতে চাই। যৌক্তিক কোনো দাবির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনারও কোনো সমস্যা নেই। এই দেশে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের আবির্ভাব হয়েছিল বিএনপির দুঃশাসন ও নির্বাচনে কারচুপি করার জন্য। বিএনপির অপকর্মগুলো ঢাকার জন্যই কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের জন্ম।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘উচ্চ আদালত বলল, কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সেহেতু এটা অবৈধ। এটা বাতিল করে দেওয়া হলো। সুপ্রিম কোর্ট কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছে। সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধন করেছে সংসদ। এই কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা আর নাই। এখন থেকে সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, ঠিক সেভাবেই নির্বাচন হবে। বিএনপির সাহেবরা সংবিধান পড়ে না। তারা পড়ে আর্মি অ্যাক্ট।’