কুষ্টিয়া শহরের মোড়ে মোড়ে তল্লাশি করে শিক্ষার্থীদের আটক করে পুলিশ। সোমবার বিকেলে শহরের চৌড়হাস মোড়ে
কুষ্টিয়া শহরের মোড়ে মোড়ে তল্লাশি করে শিক্ষার্থীদের আটক করে পুলিশ। সোমবার বিকেলে শহরের চৌড়হাস মোড়ে

৫ ঘণ্টা থানায় আটক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বললেন, ‘নিজেকে অসহায় লাগছিল’

কুষ্টিয়া শহরে গতকাল সোমবার দুপুরের পর হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যায়। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির গাড়ির টহলও চলে। তাদের সঙ্গে থাকেন ম্যাজিস্ট্রেট। বিকেলে শুরু হয় মোড়ে মোড়ে তল্লাশি। কাউকে সন্দেহ হলেই আটক করে পুলিশ। এভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষার্থীসহ ৩০ জনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। পরে রাত দুইটা নাগাদ মুচলেকা নিয়ে ২৯ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষক ও কয়েকজন শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল আটক হওয়াদের একজন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন (রাহাত)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার বেলা তিনটার কিছু সময় পর শহরের হাউজিং এলাকার মেস থেকে বের হন। সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল চৌড়হাস মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেবেন। কিন্তু পথে জানতে পারেন সেখানে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন। এ জন্য সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তিনজনই মেসে ফিরে আসছিলেন। হঠাৎ পুলিশের একটি গাড়ি এসে থামে। পথে হাঁটা অবস্থায় তাঁদের নাম–পরিচয় এবং কোথায় থাকা হয়, জানতে চায় পুলিশ। কেউ আবার ফোন চেক করতে চায়।

ইসমাইল হোসেন বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলার পর এক পুলিশ বলে, ‘তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট, তোমরা নাশকতাকারী। তোমাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তারপর আসছ। চলো থানায় চলো।’ এরপর তাঁদের থানায় নেওয়া হয়। তবে সঙ্গে থাকা এক ছাত্রীকে ছাড়াতে পেরেছিলেন।

স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে পুলিশের আচরণ সন্তোষজনক আচরণ ছিল না উল্লেখ করে ইসমাইল হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত ফোন চেক করতে চেয়েছিল বারবার। কিন্তু লক থাকার কারণে পারেনি। এরপর হাতকড়া পরিয়ে থানায় নেওয়া হয়। থানায় যাওয়ার পর হাজতখানার সামনে গ্রিল দেওয়া লম্বা বারন্দায় একসঙ্গে ৩০ জনকে রাখা হয়। রাত ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের কয়েকজন শিক্ষক আসার পর মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল হোসেন আরও বলেন, ‘পথে হাঁটা অবস্থায় ধরা, হাতকড়া পরিয়ে থানায় নেওয়া ও সেখানে প্রায় ৫ ঘণ্টা বন্দী থাকা—স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে অসহায় লাগছিল। তবে যেসব ভাইয়েরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের জন্য এটা আমার কাছে সেই হিসেবে কিছুই না।’

ছাড়া পাওয়া আরও এক শিক্ষার্থীসহ আটক হওয়ার সময় আরও দুজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের কেউ বলেছেন, হাতকড়া পরিয়ে থানায় যাওয়া জীবনে এটাই প্রথম। তবে সেটাও বেআইনিভাবে আটকের পর। কেউ বলছেন, ব্যক্তিগত কাজে তাঁরা শহরে এসেছিলেন। ছাত্র পরিচয় জানার পর তাঁদের ধরে থানায় নেওয়া হয়।

কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে যাচাই-বাছাই শেষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীসহ ২৯ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।