মুন্সিগঞ্জে ভোক্তা অধিকারের ডিজি

রসিদের মাধ্যমে ২৬-২৭ টাকায় হিমাগার থেকে আলু বেচতে হবে

জাতীয় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিদর্শক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজ মুন্সিগঞ্জে আলুর হিমাগার পরিদর্শনে যান
ছবি: প্রথম আলো

হিমাগারের মজুতদারেরা কোনো রসিদে আলুর দাম ও পরিমাণ লিখে বিক্রি করছেন না। মুঠোফোনের মাধ্যমে তাঁরা দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। এ কারণে আলুর বাজারে অস্থিরতা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পাকা রসিদের মাধ্যমে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে হিমাগার থেকে আলু বিক্রির কথা বলেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি আজ শনিবার মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর এলাকার রিভারভিউ কোল্ডস্টোরেজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেছেন, রসিদের মাধ্যমে আলু বিক্রির বিষয়টি মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেখবেন। মজুতদারেরা এই দামে আলু বিক্রি না করলে প্রশাসন এই দামে আলু বিক্রি করে যার আলু তাঁকে টাকা দেবে। তাঁর আশা, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাজার পরিস্থিতি ঠিক হবে। সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হবে।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘হিমাগার মালিক সমিতি, আলু ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসেছিলাম। তাঁদের ভাষ্যমতে, ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হলে যথেষ্ট লাভ থাকে। দেশে এবার যে পরিমাণ আলু হয়েছে, তাতে আলুর ঘাটতি নেই। অথচ একটি অদৃশ্য হাত এখানে কাজ করেছে, এক মাস ধরে আলুর বাজারকে অস্থির করে তুলেছে।’

হিমাগার পরিদর্শনে আরও ছিলেন মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবু জাফর, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আসলাম খান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিফা খান, জেলার ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম প্রমুখ।

গত বৃহস্পতিবার সরকার আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং হিমাগার পর্যায়ে ২৬ থেকে ২৭ টাকা বেঁধে দিয়েছে। তবে এটা মানছেন না ব্যবসায়ীরা। আজ মুন্সিগঞ্জের বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের বাজার ও দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।

গত দুই দিন ধরে হিমাগারে কোনো পাইকারি ক্রেতা আসছেন না। ব্যবসায়ীরাও কোনো আড়তে আলু পাঠাচ্ছেন না। আজ শনিবার সকালে মুন্সিরহাট এলাকার সুলতান কোল্ডস্টোরেজ, মুক্তারপুর এলাকার রিভারভিউ কোল্ডস্টোরেজ, পঞ্চসার কোন্ডস্টোরেজে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। হিমঘর থেকে আলু বের করে রাখলেও কোনো ক্রেতা ছিলেন না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে তাঁরা যে আলু রাখেন, সেগুলো প্রতিবছর মে মাসের পর হিমাগার থেকে বের করেন। এবার আলুর সংকট থাকায় এপ্রিল মাস থেকেই আলু বের করা শুরু হয়েছে। এ জন্য হিমাগারে আলুর সংকট আছে। মজুত রাখা আলু ২৫ থেকে ২৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। মজুত করা আলু শেষ হয়ে যাওয়ার পর কৃষকদের কাছ থেকে চড়া দরে তাঁরা আলু কিনে রেখেছেন। এখন সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করতে গেলে কেজিতে ৮ থেকে ৯ টাকা করে লোকসান গুনতে হবে। এ জন্য তাঁরা আলু বিক্রি করছেন না। সরকারি লোকজন বেশি চাপাচাপি করলে এক সপ্তাহ তাঁরা আলু বিক্রি বন্ধ রাখবেন।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘আলু বিক্রি বন্ধ রাখা নীতি-নৈতিকতার ব্যাপার। সবাই হয়তো কাজটি করবেন না। যাঁরা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ভোক্তাদের মোট আলুর চাহিদা আছে ৯৫ হাজার ৮৮ টন। উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৩ টন। জেলার হিমাগারগুলোতে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মজুত ছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ১৮২ টন আলু। জাতীয় পর্যায়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টন। দেশে আলুর চাহিদা ৭০ থেকে ৮০ লাখ টন। সেই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকে ৩৬ লাখ টনের বেশি আলু।

তবে হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, হিমাগারে যে পরিমাণ আলু মজুত আছে, ডিসেম্বরের আগেই তা শেষ হয়ে যাবে। এতে দেশে আলুর সংকট তৈরি হবে।