বেশ যত্ন নিয়েই সাজানো হয়েছে স্টলগুলো। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে নানা প্রজাতির ফুল, ফল আর ঔষধি গাছের চারায় সজ্জিত করেছেন নার্সারির মালিকেরা। কিন্তু যাঁদের জন্য এত আয়োজন, সেই কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা মিলছে না। পঞ্চগড় জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র পঞ্চগড় সরকারি অডিটরিয়াম চত্বরে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ আয়োজিত এবারের বৃক্ষমেলায় এখন এমনই চিত্র।
বিক্রেতাদের দাবি, ১৮ জুলাই মেলা শুরুর পরদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ আর চলমান কারফিউয়ের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে।
৩১ জুলাই বৃক্ষমেলা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এতে পঞ্চগড় জেলা শহর ছাড়াও অন্যান্য উপজেলা থেকে আসা নার্সারির মালিকেরা বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারার পসরা সাজিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, মেলায় তৈরি করা মূল তোরণের বেশির ভাগ অংশের কাপড় ছেঁড়া, এতে লাগানো ব্যানারটিও উধাও। মেলাজুড়ে সুনশান নীরবতা। বসে বসে অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। কেউ কথা বলছেন মুঠোফোনে, কেউবা পানি দিচ্ছেন চারা গাছে। বিক্রেতাদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার স্পষ্ট ছাপ দেখা যায়।
সোনার বাংলা নার্সারির স্টলের বিক্রেতা মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আজ (গতকাল) সারা দিনই সাইত (প্রথম বিক্রি) করতে পারিনি। মেলা শুরুর পর শুধু বুধবার এক হাজার টাকার গাছের চারা বিক্রি করেছি। আর কোনো বিক্রি হয়নি। গত বৃহস্পতিবার থেকে আজ (গতকাল) বৃহস্পতিবার মোট আট দিনে মালিক আমাকে চার হাজার টাকা বেতন দিয়েছেন, সেটাও তাঁর লোকসান।’
মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার সময় আবু হুর (৬০) নামের আরেকজন জানান, তিনি ভাই ভাই নার্সারির কর্মচারী। মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘মেলা শুরুর পরদিন এখানে পুলিশের সঙ্গে কিছু লোকের সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন আমরা মেলার ভেতরেই ছিলাম। একদল লোক এসে মেলার গেট (তোরণ) ভেঙে দেয়। গেটের ব্যানার আর কাপড়চোপর ছিঁড়ে নিয়ে সড়কে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আমি মাথায় আঘাত পাই। এর পর থেকে তো কারফিউ শুরু হলো। লোকজন আসতে না পারায় মেলায় আর কোনো বিক্রি নাই। শুধু বসে বসে পাহারা দিচ্ছি।’
পঞ্চগড় জেলা নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি ও ভাই ভাই নার্সারির স্বত্বাধিকারী মো. আমানুল্লাহ বলেন, ‘আট দিন ধরে শুধু লোকসান গুনছি। প্রতিদিন কর্মচারীদের খরচ বাবদ তিন হাজার টাকা দিতে হয়। সেই সঙ্গে আমি নিজে অন্য কাজ রেখে এখানে আছি। মেলায় আমাদের সময় দেওয়া হয়েছে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এর মধ্যেই যদি মেলা শেষ হয়, তাহলে এবার লোকসান ছাড়া কোনো উপায় নাই। আমরা সময় বাড়ানোর দাবি করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চগড় সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রক্ষিণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।