সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ

পুকুরেই গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন করছেন আজিজুর 

ইছামতী, কাকশিয়ালি ও কালিন্দি নদী থেকে সংগৃহীত ৬০-৮০ গ্রাম ওজনের ১৭৯টি মা গলদা আজিজুরের ৮০ শতকের একটি পুকুরে ছাড়া হয়। 

আজিজুর রহমানের গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন খামার। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তারালি ইউনিয়নের সন্ন্যাসীরচক গ্রামে। গত সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

দেশে গলদা চিংড়ি চাষে যে পরিমাণ পোনা সরবরাহ থাকা প্রয়োজন, তার মাত্র ৫ শতাংশ দেশের হ্যাচারিগুলো পূরণ করতে পারে। ৯৫ শতাংশ পোনা চোরাই পথে ভারত থেকে আসে অথবা অবৈধভাবে নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সংকট মেটাতে পুকুরে গলদা পোনা উৎপাদনের চেষ্টা চলছিল অনেক দিন ধরেই। গবেষকদের পাশাপাশি স্থানীয় চিংড়িচাষিরা চেষ্টা করছিলেন নিজেদের মতো করে। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের চিংড়িচাষি আজিজুর রহমান (৫০) এ কাজে সফল হয়েছেন। 

উপজেলার তারালি ইউনিয়নের সন্ন্যাসীরচক গ্রামে ৮০ শতকের একটি পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনা (পোস্ট লার্ভা-পিএল) উৎপাদন করে এ মৌসুমে বিনিয়োগের কয়েক গুণ লাভ করতে যাচ্ছেন আজিজুর রহমান। 

কালীগঞ্জ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, কালিগঞ্জ কালীগঞ্জের ইছামতী, কাকশিয়ালি ও কালিন্দি নদী থেকে সংগৃহীত ৬০-৮০ গ্রাম ওজনের ১৭৯টি মা গলদা (ব্রুড) আজিজুর রহমানের ৮০ শতক জমির একটি পুকুরে গত ১৯ এপ্রিল ছাড়া হয়। আধা নিবিড় (সেমিইনটেনসিভ) বাগদা চিংড়ি চাষের পুকুরের মতো করে পুকুর প্রস্তুত করা হয়। পানির স্যালাইনটি ৮-১২ পিপিটির মধ্যে রাখা হয়। মাত্র এক মাসের মাথায় ১৯ মে পোনা ধরা শুরু করা হয়। পুকুরটি মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিনি সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন। 

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, ভারতে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে মাটির পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে সফলতা এসেছে। মেদিনীপুরের অনুকরণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় মাটির পুকুরের পোনা উৎপাদনের চেষ্টা চালানো হচ্ছিল সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে। তারই ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের সন্ন্যাসীরচক এলাকায় আজিজুর রহমানের একটি পুকুরে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে সফলতা পাওয়া গেছে।

গত সোমবার দুপুরে আজিজুরের গলদা চিংড়ি উৎপাদন খামারে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। আজিজুর বলেন, ৮০ শতক জমির ইজারামূল্য ৩০ হাজার টাকাসহ সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকা। গত পাঁচ দিনে আড়াই লাখ পোনা ধরে বিক্রি করেছেন সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। এখনো ২০ লাখেরও বেশি পোনা রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তা বিক্রি হবে ৪০-৪৫ লাখ টাকায়। 

এ সময় ওই খামারে কথা হয় ভাঙ্গানমারি গ্রামের আজগর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, গলদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করতে প্রচুর সমস্যায় পড়তে হয়। পোনা আনতে হয় চড়া মূল্যে ভারত থেকে চোরাই পথে। অনেক সময় টাকা দিয়েও চাহিদামতো পোনা পাওয়া যায় না। চলতি মাসের ১৯ তারিখ খবর পান, সন্ন্যাসীরচকের আজিজুর রহমানের মাটির পুকুরে গলদা পোনা উৎপাদন হয়েছে। ভারত থেকে পোনা আনতে প্রতি হাজার মূল্য পড়ে ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা। সেখানে এখানে প্রতি হাজার পোনা ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তিনি তিন বিঘার পুকুরের চাষের জন্য ছয় হাজার পোনা কিনেছেন।