ময়মনসিংহে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানের পর ফয়সাল খান নামে এক তরুণের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কক্সবাজার থেকে গত শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তারের পর আজ রোববার বিকেলে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার উত্তরগন্ডা এলাকার মোস্তফা হাবিবের ছেলে ফরহাদ তানভীর ওরফে তুষার (২৫) এবং একই উপজেলার চরগন্ডা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. কাউছার মিয়া (২৪)। পুলিশ জানায়, ডিবির অভিযানের সময় তাঁরা বাসার ভেতরে ঢোকেননি। তবে সিসিটিভি ফুটেজে তাঁদের বাসার আশপাশে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজারের লালদীঘি মোড় এলাকা থেকে সন্দেহভাজন দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বিকেলে তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ড শুনানি না হওয়ায় তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের পর মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মারা যাওয়া ফয়সাল খান ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা কাশিপুর এলাকার সেলিম খানের ছেলে। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে নগরের কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউস রোডে বড় বোনের বাসায় থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।
স্বজনেরা জানান, চার বছর ধরে ফয়সালের সঙ্গে একই এলাকার এক তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি মেয়েটির সরকারি চাকরি হয়। এরপর অন্য আরেকজনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হলে ফয়সালের সঙ্গে তরুণীর দূরত্ব তৈরি হয়। ফয়সাল বিয়েতে বাধা দিতে চাইলে তরুণীর বাবা ১০ নভেম্বর পর্নোগ্রাফি আইনে থানা ও ডিবি পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করেন। ওই দিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফয়সালের বোনের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। ডিবির অভিযানের সময় দুজন বহিরাগত সঙ্গে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন তরুণীর খালাতো ভাই। ডিবি অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পর বাসার সামনে ফয়সালকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করলে ১৫ নভেম্বর তিনি মারা যান। অভিযানের সময় তরুণীর খালাতো ভাই ও অজ্ঞাতপরিচয়ের আরেক তরুণকে সঙ্গে নিয়ে যায় ডিবি। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
ফয়সালের আহত হওয়ার ঘটনায় ১২ নভেম্বর রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন তাঁর বাবা সেলিম খান। এতে তরুণীর বাবাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে ছাদ থেকে ৬০ ফুট নিচে ফয়সালকে ফেলে দিয়েছে বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়।
সেলিম খান আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের আমরা চিনি না। যাঁরা ঘটনা ঘটিয়েছে, তাঁদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। অথচ মামলা করেছি ১২ দিন পেরিয়ে গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের (মূল অভিযুক্ত) খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না।’
ডিবির অভিযানের পর রহস্যনজক মৃত্যুর ঘটনায় ১৭ নভেম্বর রাতে পুলিশ সুপার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। অভিযানে ডিবি পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ঘটনাটিতে ‘পুলিশের ব্যত্যয়’ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু এখনো তদন্তকাজ শেষ হয়নি। তদন্তের অগ্রগতি জানতে আজ সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শামীম হোসেনকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
তদন্ত কমিটির সদস্য আদালত পুলিশের পরিদর্শক পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তদন্তকাজ চলমান। দুজন আসামিকে ইতিমধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। রিমান্ডে আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া যেতে পারে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তদন্তকাজ শেষ করতে আরও কিছু সময় লাগবে।’