নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেছেন, বর্তমানে একটি ভয়ের অপসংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, যা থেকে ভালো এবং মহৎ কিছু আশা করা যায় না। রাজনীতি ও সংস্কৃতি একসঙ্গে চলতে না পারলে এ বাধা কাটানো যাবে না। ধর্ম ব্যবসায়ীরা সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শিল্পীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। তবে এ জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা।
আজ শনিবার সকালে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত ‘শিল্পীর নাগরিক দায়, জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। তিন দিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় গণসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিনে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচনায় আরও অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও গবেষক শামসুল হক। সূচনা বক্তব্য রাখেন গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন হাবিবুল আলম।
মামুনুর রশীদ বলেন, একসময় সংস্কৃতিকর্মী এবং শিল্পীদের কাছে রাজনৈতিক কর্মীরা যেতেন। কাগমারী সম্মেলনে অধিকাংশ তোরণ ছিল শিল্পী, নাট্যকার ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে। নব্বইয়ের অভ্যুত্থানে যদি শিল্পীরা রাজনীতির সঙ্গে না থাকতেন, তাহলে তা সম্ভব হতো না। জীবনসংগ্রামে শিল্পের প্রতি দায় মেটান সংস্কৃতিকর্মীরা। কিন্তু এখন তাতে ছেদ পড়েছে। সংগ্রামের পথ থেকে যে সংস্কৃতিকর্মী পলাতক, তাঁর পক্ষে শিল্প করা সম্ভব নয়।
মামুনুর রশীদ আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিল্পীর নাগরিক দায় আছে। নাগরিক দায় পালন করতে গিয়ে কঠোর জীবনসংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়। লালনকে কেন্দ্র করে বাউল গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। অথচ তারা এখন নিপীড়িত। কারণ, তাদের ধর্মপরিচয়। ধর্ম ব্যবসায়ীরা বাউলদের নির্যাতন করেন। বাউলদের গ্রাম ছাড়া করেছেন, চুল কেটে দিয়েছেন। আমরা প্রতিবাদ করেছি। কিছু কিছু প্রতিবাদের কাজ হয়েছে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা সমাজকে বিভ্রান্ত করেন। এ জন্য শিল্পীদের ভূমিকা আছে। আমরা কিছু দায় মেটাতে পারছি, কিছু পারছি না। আমাদের জীবনে কি আমরা সংগ্রাম করতে প্রস্তুত?’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, রাষ্ট্রভাবনা ও সমাজভাবনা না থাকলে প্রকৃত শিল্পী হওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক পরিচয় অবশ্যই থাকতে হবে। কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন ছিল। তিনি তো ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছিলেন। কবি নজরুলের রাজনৈতিক দর্শন ছিল। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন।
সেমিনারে লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ শামসুল হক বলেন, স্বাধীনতার চেতনা থেকে আমরা সরে যাচ্ছি। এ দেশ যখন সুন্দর অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল, তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো। এরপরই সংস্কৃতিকর্মী আর লেখকেরা ভাগ হয়ে গেলেন। রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে শিল্পীরাও আলাদা হয়ে যান। একসময় এলাকায় যাত্রাপালা হতো। গণসংগীত হতো। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের পর ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়েছে।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ বিকেলে দলীয় সংগীত পর্বে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান পরিবেশন করে যশোরের দল পুনশ্চ, শাহ আবদুল করিমের গান পরিবেশন করে সিলেটের অন্বেষা শিল্পীগোষ্ঠী, কৃষক আন্দোলনের গান পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা, শেখ লুৎফর রহমানের গান পরিবেশন কর ঢাকা সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, সলিল চৌধুরীর গান পরিবেশন করবে ঢাকার বহ্নিশিখা, চাকমা ভাষার গণসংগীত পরিবেশন করে রাঙামাটির গিরিসুর শিল্পীগোষ্ঠী, ভাষা আন্দোলনের গান পরিবেশন করে চট্টগ্রামের ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ, আখতার হুসেন ও সেলিম রেজার গান পরিবেশন করেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর শিল্পীরা।