বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ১৫ জন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আজ সোমবার বেলা ২টায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ব্যানারে রাজনীতি করেন এমন শিক্ষার্থীরা লাঠি, রড, পাইপ নিয়ে এই হামলা চালান। আহতদের মধ্যে ৯ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল শাখার সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁরা। কিন্তু কিছু পত্রিকায় উল্টো সংবাদ আসে। এ নিয়ে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এ কে আরাফাতের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা বেধড়ক পিটিয়ে অন্তত ১৫ জনকে আহত করে।
সুজয় শুভ বলেন, আহতদের মধ্যে মাহামুদুল হাসান, সুজন মাহামুদ, শর্মিলা জাহান ও সিরাজুল ইসলামের আঘাত কিছুটা গুরুতর।
অভিযোগের বিষয়ে এ কে আরাফাতকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে হামলার সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান বলেন, হামলার খবর শুনে তাঁরা উপস্থিত হয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনেন। যত দূর শুনেছেন, আন্দোলনের পক্ষের ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ ছাত্রদের হাতাহাতিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবদুল কাইউমকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম, খুনের প্রতিবাদে সরকারি বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ করেছেন। ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে তাঁরা নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ এলাকায় যান। পরে বিক্ষোভকারীদের সেখানে আটকে দেয় পুলিশ। তখন তাঁরা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, যত দিন গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম, খুন চলবে তত দিন আন্দোলন চলবে।
বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে ফেরত পাঠিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা পুলিশের অনুরোধে বিক্ষোভ বন্ধ করে নথুল্লাবাদ এলাকা ছেড়ে যান।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের হামলা, গুম-হত্যার বিচার, ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গ্রাফিতি এঁকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় নানা গ্রাফিতি অঙ্কনের মাধ্যমে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
গ্রাফিতিতে শিক্ষার্থীরা নিহত আবু সাঈদসহ বিভিন্ন বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। পাশাপাশি দেয়াল লিখনে শিক্ষার্থীরা লেখেন ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’, ‘একি সভ্যতা নাকি সব ভোঁতা?’, ‘মাথা উঁচু রাখাই নিয়ম!’ ‘রাষ্ট্রযন্ত্র না গণতন্ত্র’।