রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ডেঙ্গু প্রতিরোধে কেবল প্রচারে জোর, মশকনিধনে নজর নেই

নালা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পানির সঙ্গে আবর্জনা জমে আছে। গতকাল রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক লতিফ হলের পিছনের দিকে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশার উৎপাত বেড়েছে। আবাসিক হল, শ্রেণিকক্ষ কিংবা প্রশাসনিক ভবন—কোথাও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই মিলছে না। এ কারণে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসের ড্রেন ও ঝোপঝাড় নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার বংশবিস্তার বাড়ছে।

এমন অবস্থায় ক্যাম্পাসে মশকনিধনে কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কেবল একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও প্রশাসন বলছে, ক্যাম্পাসে দ্রুতই মশকনিধন কার্যক্রম শুরু হবে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসের অন্যান্য জায়গার তুলনায় আবাসিক হলগুলোয় মশার উৎপাত বেশি। হলগুলোর আশপাশে ঝোপঝাড় ও ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এ ছাড়া বৃষ্টি হলেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে, যেখানে মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়। এসব বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে প্রশাসন শুধু লোকদেখানো কাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৭ জুলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধ সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সভায় আবাসিক হলগুলোসহ ক্যাম্পাসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও মশার বংশবিস্তার রোধ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এর দুই দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম এক বিজ্ঞপ্তিতে হল প্রশাসন, প্রক্টর দপ্তর, অনুষদের ডিন ও বিভাগের সভাপতিদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং চিকিৎসায় করণীয় সম্পর্কে ক্যাম্পাসে লিফলেট ও ব্যানার টানাতে বলেন। এর বাইরে ডেঙ্গু ও মশকনিধনে প্রশাসনের কোনো কার্যক্রম লক্ষ করা যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার ‘ইউনিভার্সিটি অব রাজশাহী’ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় করণীয় সম্পর্কে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে শাফিকুল এহসান সিফাত নামের আইডি থেকে কমেন্টে করা হয়, ‘ব্যানার বানিয়েই শেষ। আসল কাজ কে করবে? মশা তো আর নিজে থেকে সুইসাইড করবে না।’

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের আশপাশে ও একাডেমিক ভবনগুলোর ধারে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া প্যারিস রোডসংলগ্ন ড্রেনে পানির সঙ্গে ময়লা জমে থাকতে দেখা গেছে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের নর্দমাসহ বিভিন্ন জায়গার ঝোপঝাড় দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয় না। এ কারণে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মশার উপদ্রব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আমির আলী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাকিব আহমেদ বলেন, ‘হলের অনেক শিক্ষার্থী রাত জেগে পড়াশোনা করে। মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের মশারি টানিয়ে পড়তে হয়। দিনের বেলাও অনেকটা একই অবস্থা। ড্রেন ও ঝোপঝাড় নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েই যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসন থেকে মশকনিধনের ওষুধ ছিটালেও তা যথেষ্ট নয়।’

সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উদয়ন কর্মকার। তিনি বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলাম। রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এক মাসের বেশি সময় আমার চিকিৎসা গ্রহণ ও বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এতে আমার পড়াশোনার ক্ষতি হয়।’

শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মিশন চাকমা বলেন, আবাসিক হলগুলোর ড্রেনে পানি জমে থাকার কারণে মশার বংশবিস্তার বেড়ে যাচ্ছে। তিনি কয়েক দিন ধরে অসুস্থ বোধ করছেন। শরীরে জ্বর। ডেঙ্গু রোগের আশঙ্কায় ব্লাড টেস্ট করতে দিয়েছেন। হলের ড্রেনগুলোসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে তাঁরা ডেঙ্গু থেকে নিস্তার পেতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।

মশকনিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান তবিবুর রহমান। তিনি বলেন, মশার কামড়ে মূলত ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা মশাবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আলোচনা সভা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে সর্বত্র মশকনিধনে কীটনাশক ছিটানো প্রয়োজন। অন্যথায় মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়বে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সব হলের প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এ নিয়ে একটি প্রচারপত্র চূড়ান্ত করেছেন। চিকিৎসা থেকে শুরু করে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার, সবকিছু প্রচারপত্রে উল্লেখ করা থাকবে। এ ছাড়া মশার প্রজননস্থলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে বলেছেন, ক্যাম্পাসে যেন মশকনিধনের ওষুধ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ফগার মেশিন আছে। আপাতত সেগুলো দিয়েই দু-এক দিনের মধ্যেই মশকনিধন কার্যক্রম শুরু হবে।