গাইবান্ধা

সড়কে বিশৃঙ্খলা, ঘটছে দুর্ঘটনা

গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের ছয়টি স্থানে দোকান ও বাজার গড়ে উঠেছে। যত্রতত্র গাড়ি রাখায় সৃষ্টি হয় যানজটের। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। বুধবার গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলসীঘাট বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

সড়কে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে রাখা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। কিছুক্ষণ পরপর থামছে বাস। সড়ক দিয়ে দ্রুতগতিতে চলাচল করছে ট্রাক। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে পথচারীরা। এভাবে চলাচল করায় সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় মানুষ নিহত ও আহত হচ্ছে।  যানজট, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং দুই পাশে বাজার থাকায় ভয়ংকর হয়ে উঠেছে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়ক। চলতি বছরে এই সড়কে অন্তত ৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। 

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক থেকে গাইবান্ধা শহরের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এ মহাসড়ক থেকে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়ক ধরে জেলা শহরে যেতে হয়। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। সড়কের তিনমাইল, তুলসীঘাট বাজার, মাঠেরহাট, বুড়িরঘর, ঢোলভাঙ্গা এলাকা ও পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দোকানপাট ও বাজার গড়ে তোলা হয়েছে। 

গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে ৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় দুজন নিহত এবং আটজন আহত হন। গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ব্যবস্থাপক নাছিম রেজা বলেন, চালকেরা বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালান। সড়কে অটোরিকশার সংখ্যাও বেশি থাকে। এ ছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে সময় নিয়ে সড়ক পার হওয়ার প্রবণতা কম। ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। 

 গত বুধবার দুপুরে জেলা শহরের অদূরে সড়কের তুলসীঘাট বাজারে দেখা যায়, বাজারের সামনে যানবাহনের জটলা। দুই পাশের সড়কে এলোমেলোভাবে ইজিবাইক দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলোর কারণে মূল সড়কটি সংকুচিত হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর বাস এসে হর্ন দিচ্ছে। কিছু বাস সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠাচ্ছে ও নামাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে হঠাৎ হঠাৎ দ্রুতগতিতে ট্রাক আসা-যাওয়া করছে। এর মধ্য দিয়েই পথচারীরা সড়ক পারাপার হচ্ছে।  

তুলসীঘাট বাজার এলাকার ব্যবসায়ী শাকিল মিয়া বলেন, বাজার এলাকায় গতিরোধক নেই। নেই কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। সড়ক বিভাজক না থাকায় উভয় দিক থেকে দ্রুতগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। 

আরেক ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান (৩৫) জানান, এখানে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। যানজট ছাড়লে গাড়ি দ্রুত যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন ঘটে দুর্ঘটনা। বাজার এলাকায় কোনো জেব্রাক্রসিং নেই।

চাকরিজীবী মাসুদার রহমান বলেন, সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার এ এলাকায় হাট বসে। হাটের দিন অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া যেখানে-সেখানে যানবাহন থামছে। এখানে ট্রাফিক পুলিশ দেওয়া দরকার। 

সড়কের ঢোলভাঙ্গা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাজারের পশ্চিম দিকে সড়কের বাঁক। বাঁকে কোনো গতিরোধক নেই। ট্রাকচালক উত্তম কুমার বলেন, গোটা সড়কে একই গতিবেগে ট্রাক চালানো সম্ভব হয় না। যখন বাঁক আসে, তখন বিপরীত দিক থেকে যানবাহন আসছে কি না, বোঝা যায় না। ফলে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা বাঁকেই ঘটছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবু মিয়া (৫৫) বলেন, পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে রোগীর কারণে লোকজনের ভিড় লেগে থাকে। এখানে গতিরোধক নেই। 

সংস্কৃতিকর্মী শামীম সরকার, এক মাসের ব্যবধানে রাস্তা পারাপারের সময় তুলসীঘাট বাজার এলাকায় তিনটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই তুলসীঘাট বাজার এলাকায় গতিরোধক নির্মাণের পাশাপাশি যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে এলাকাবাসী আন্দোলন করছেন। তবে তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। 

জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) নুর আলম সিদ্দিক বলেন, তুলসীঘাট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দেওয়া হবে।

গাইবান্ধা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ আখতার বলেন, তুলসীঘাট বাজারসহ যেসব স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে, সেসব জায়গা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।