ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচনে হেরে যাওয়া নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আহমেদকে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামানের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ফয়সালকে আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে বলে উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ করা হয়। পরে বিকেলে ফয়সালকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মারধরের শিকার ফয়সাল আহমেদ ত্রিশালের কবি নজরুল কলেজের মানবিক বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর ফয়সালকে মারধরের বিষয়টি জানাজানি হয়।
আজ সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান ত্রিশাল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হাসান ওরফে সোহান। এ সময় ত্রিশাল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদ, ত্রিশাল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর দুলাল উদ্দিন মণ্ডল, ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোমিনুল হাসান বলেন, ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ বি এম আনিছুজ্জামান। সংসদ নির্বাচনের পর গত শনিবার অনুষ্ঠিত হয় ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র পদের উপনির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামানের স্ত্রী শামীমা আক্তার। নির্বাচনে শামীমা আক্তার পরাজিত হন। রাতে ফয়সাল আহমেদ ফেসবুকে শামীমা আক্তারকে ইঙ্গিত করে একটি পোস্টে লেখেন, ‘এখন নয় (৯) সন্তানের মায়ের কি হবে।’ ৯ সন্তান বলতে পৌরসভার ৯ জন কাউন্সিলরকে বোঝানো হতে পারে ধারণা করা হয়। ফয়সালের এমন পোস্টের পর তিনি সেই পোস্ট ডিলিট করে দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু এ পোস্টের জেরে গতকাল দুপুরে ত্রিশাল শহরের মহিলা কলেজের সামনের একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার থেকে সংসদ সদস্যের ছেলে সাদমান সামিনসহ কয়েকজন ফয়সালকে তুলে নিয়ে যান গো-হাটা এলাকার সংসদ সদস্যের বাড়িতে। সেখানে ছাদে তুলে ফয়সালের ওপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য আনিছুজ্জামান নিজেও শারীরিক নির্যাতন করেন। নির্যাতনের পর পুলিশকে খবর দিয়ে ফয়সালের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখাতে বলেন সংসদ সদস্য। তবে পুলিশ ফয়সালকে উদ্ধার করলেও তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনা জানাজানি হলে ফয়সালকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া এবং মারধরকারীদের বিচারের দাবিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী গতকাল রোববার রাত নয়টার দিকে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম শামসুদ্দিনের অনুরোধে পুলিশ ফয়সালকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। অবরোধ তুলে নিয়ে নেতা-কর্মীরা যখন ফয়সালকে ছাড়িয়ে নিতে থানার দিকে যাচ্ছিলেন, তখন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হন। গুরুতর আহত ত্রিশাল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুস ছাত্তার, জাকারিয়া মাহমুদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে কথা বলতে সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামানের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি। ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগ নেতা ফয়সালকে গতকাল বিকেলে সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামানের বাড়ি থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। পরে ত্রিশাল উপজেলা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁকে নিয়ে যান। তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক কাউন্সিলর দুলাল উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘আমার ছেলে ইমরান হোসেন গতকাল রাতে সংসদ সদস্যের অনুসারীদের হামলায় আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। আমাদের ওয়ার্ডে সংসদ সদস্যে আনিছুজ্জামানের স্ত্রী পরাজিত হওয়ার জের ধরেই আমাদের হুমকি দেওয়া হয়। পরে রাতে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা আমার ছেলেকে মেরে আহত করেছেন।’
ত্রিশাল থানার ওসি কামাল হোসেন আরও বলেন, সংসদ সদস্যের বাড়ি থেকে ফয়সালকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সংসদ সদস্য নির্যাতন করেছেন কি না, সেটি তদন্তের বিষয়। ফয়সালকে মারধর এবং গতকাল রাতে অবরোধের সময় হামলার ঘটনায় আজ দুপুর পর্যন্ত ত্রিশাল থানায় কোনো মামলা বা লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।