যশোর শহরের ব্যস্ত শেখ মুজিবুর রহমান সড়কে এক যুবকের পেছনে ছুটছেন সাত যুবক। মারধর চলছে সমানে। পেছনে থাকা যুবকদের মধ্যে দুজনের হাতে ছুরি। তাঁরা এলোপাতাড়ি ছুরি চালিয়ে জখম করছেন সামনের যুবকটিকে। একপর্যায়ে ওই যুবক ফুটপাতে লুটিয়ে পড়লে তাঁরা পালিয়ে যান। এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে (ভাইরাল) পড়েছে। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে যশোর শহরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়কের রেল গেট এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
সাত যুবক যাঁকে মারছিলেন, তাঁর নাম রিপন হোসেন (৩০)। বাড়ি শহরের খড়কি কবরস্থান এলাকায়। রিপন হালকা প্রকৌশলশিল্পের লেদ কারখানার শ্রমিক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি যুবলীগের রাজনীতির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে ময়নাতদন্ত শেষে রিপনের লাশ আজ মঙ্গলবার বিকেলে পরিবারের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। কারবালা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। এমনকি এ বিষয়ে কোনো মামলাও নথিভুক্ত হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাতজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁদের নাম–পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে।
আজ বিকেলে শহরের খড়কি এলাকায় নিহত রিপনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রিপনের আট মাসের কন্যাসন্তান কেঁদেই যাচ্ছে। বাড়ির ভেতরে চেয়ারে বসে রিপনের মা রুপবান বেগম বিলাপ করছেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে রিপন তৃতীয়। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, রিপনকে যাঁরা হত্যা করেছেন, তাঁরা এলাকার চিহ্নিত ও একসময়ের রাজনীতিক সহকর্মী ছিলেন। রিপন আগে রাজনীতি করলেও সন্তান হওয়ার পর তিনি আর রাজনীতি করতেন না। লেদে কাজ করেই সংসার চালাতেন।
পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে স্ত্রী ও আট মাস বয়সী মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে বাড়িতে আসেন রিপন। এরপর বাড়িতে খাবার খেয়ে সন্ধ্যায় শহরে বের হন। রাত আটটার দিকে যশোর রেলস্টেশন এলাকা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। শহরের রেল গেট এলাকায় পৌঁছালে প্রতিপক্ষের লোকজন অতর্কিত ছুরি মেরে জখম করেন। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রুপবান বেগম বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় রিপন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর খবর আসে যে তাকে এলাকার ইমন, সাকলাইনসহ কয়েকজন মিলে ছুরি মেরেছে। সে হাসপাতালে রয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে আমরা তার লাশ পেয়েছি। স্থানীয় খড়কি এলাকার সন্ত্রাসী ও যুবলীগের নেতা আক্তারুজ্জামান ডিকুর সঙ্গে একসময় রাজনীতি করত রিপন। ডিকুর সঙ্গে মিছিল–মিটিং করত রিপন। কয়েক বছর থেকে রিপন ডিকুর সঙ্গে আর রাজনীতি করত না। এ জন্য তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।’
অনেকটা একই রকম বক্তব্য নিহত রিপনের বোন নিলুফার ইয়াসমিনেরও। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খড়কি এলাকায় আদিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন আক্তারুজ্জামান ডিকু ও অন্যটি হাফিজুর রহমান ওরফে ভুট্টো। নিহত রিপন একসময় ডিকুর সঙ্গে চলাচল করলেও পরে তিনি হাফিজুরের সঙ্গে চলাচল করতেন। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ ও মিছিলে লোক নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রায়ই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ হত্যার ঘটনায় আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা করেনি রিপনের পরিবার। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যশোর পৌরসভার এক কাউন্সিলরসহ পাঁচজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।