আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ নৌকার পক্ষে কাজ না করলে আর কোনো দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে পারবে না বলে হুমকি দিয়েছেন বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার বরগুনার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি এ বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে এ বক্তব্য নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন।
সিদ্দিকুর রহমান সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি বরগুনা–১ (সদর–আমতলী–তালতলী) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ভায়রা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দুই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য গোলাম ছরোয়ার ফোরকান।
সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে গতকালের ওই সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্বাস হোসেন মোল্লা, কামরুল আহসান মহারাজ, জেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম প্রমুখ।
বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্য দিতে এসে আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান প্রথমে নেতা–কর্মীদের প্রশ্ন করেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় কয় বছর পরে?’ তখন নেতা–কর্মীরা সমস্বরে উত্তর দেন, পাঁচ বছর। এরপর তিনি বলেন, ‘সেই নির্বাচনে যদি নৌকা কেউ করতে না পারে, সে কি দল করতে পারবে? বলেন?’ সবাই উত্তরে বলেন, না। এরপর সিদ্দিকুর রহমান মঞ্চে উপস্থিত নেতাদের সাক্ষী মেনে বলেন, ‘যদি কোনো আওয়ামী লীগ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নৌকার উল্টো করে সে দল করতে পারবে না, পরিষ্কার। আমি সিদ্দিক মিয়া বললাম, সে দল করতে পারবে না।’
এরপর সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে আমার প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বারবার ষড়যন্ত্র করছে, তাকে মারার চেষ্টা করছে। ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র কোথায় ছিল, এখন মানবাধিকারের কথা বলছে। যখন চার নেতাকে জেলের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে, তখন তারা কোথায় ছিল। তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল।’
এ বক্তব্যের বিষয়ে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্বাস হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকার পক্ষে কাজ না করলে আর কোনো দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে পারবে না—এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক কেন্দ্র। এটা উপজেলা বা জেলা শাখার নেতারা বলতে পারবেন না। এটা বললেও তাঁর বলাটা ঠিক হয়নি। তাঁর এই বক্তব্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
এ বিষয়ে জানতে বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।