বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিবাদের মুখে একটি কমিটি থেকে অধ্যাপক কলিমুল্লাহ বাদ

অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ
ফাইল ছবি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পূর্বতন চাকরিকাল গণনাসংক্রান্ত কমিটি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে এই কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সোমবার বিকেলে এ-সংক্রান্ত দাপ্তরিক আদেশ জারি করা হয়েছে এবং ওই কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। তবে আরও দুটি কমিটি থেকে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে বাদ দেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে জানেন না বলে রেজিস্ট্রার জানান। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ওই দুই পদে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ নিয়োগ দিয়েছে। তাই এ দুটি পদ থেকে তাঁকে বাদ দেওয়ার এখতিয়ার তাঁদের নেই।

এর আগে ৭ নভেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পূর্বতন চাকরিকাল গণনার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে আহ্বায়ক করা হয়। আরেক চিঠিতে তাঁকে একাডেমিক কাউন্সিল ও পরীক্ষা কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়।

গত রোববার (১৭ নভেম্বর) রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলসহ গুরুত্বপূর্ণ তিন কমিটিতে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে প্রক্টরের মাধ্যমে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

কলিমুল্লাহকে একটি কমিটির আহ্বায়ক পদ থেকে বাদ দিয়ে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নতুন দাপ্তরিক আদেশে চাকরিকাল গণনাসংক্রান্ত আগের কমিটি বিলুপ্ত করে পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক মো. শরীফ হোসেনকে আহ্বায়ক এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের উপপরিচালক মোহা. মশিউর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল মোজাদ্দেদী আলফেছানী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল আলিম বছির এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনোয়ারা বেগমকে সদস্য করা হয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. রাহাত হোসাইন বলেন, বেরোবির সাবেক ভিসি ও বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য মনোনয়ন দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া আরও দুটি কমিটিতে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিয়েছিলেন।

উপাচার্যকে দেওয়া ওই স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছিলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বিতর্কিত ব্যক্তি অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি পীড়াদায়ক। অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবগুলো পাতানো নির্বাচনকে বৈধতা দিতে তাঁর নিয়ন্ত্রিত জানিপপ (জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ) সামনের সারিতে থেকে স্বৈরশাসকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকাসহ টেলিভিশন টক শোতে স্বৈরশাসক আওয়ামী প্রশাসনের তৈলমর্দন করেছেন। বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগের সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল, পরীক্ষা কমিটি ও আগের চাকরি গণনা কমিটিতে স্থান পাওয়ায় ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মহিমাকে কলুষিত করছে। তাঁকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানের অনুমতি দেওয়ার ফলে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা এক হয়ে লড়াই করতে বদ্ধপরিকর। শিক্ষার্থীরা সর্বাত্মকভাবে তাঁকে বয়কট করায় কোনোভাবেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর উপস্থিতি মেনে নেবে না।’

শিক্ষার্থীদের এমন প্রতিক্রিয়ার পর একটি কমিটির আহ্বায়ক পদ থেকে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বাদ দেওয়া হলো। তবে বাকি দুটি পদে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।