রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ ও যৌনপল্লিতে বিক্রির দায়ে দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান এ রায় দেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ইয়াসমিন ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লালচাঁদপুর গ্রামের জব্বার শেখের ছেলে আবদুল ওহিদ।
এ মামলার তারামনি নামের অপ্রাপ্তবয়স্ক এক আসামিকে আট বছরের আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে। সে বদরগঞ্জ উপজেলার চান্দেরডাঙ্গা গ্রামের এন্তাজুল হকের মেয়ে। এ ছাড়া অপর আসামি মানিক মিয়াকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আদালত আসামি ইয়াসমিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং আবদুল ওহিদকে দুটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। পাশাপাশি শিশু তারামনিকে আট বছরের আটকাদেশ দিয়ে সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সে প্রাপ্তবয়স্ক হলে কারাগারে পাঠানো হবে।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে ইয়াসমিন, তারামনি ও মানিক মিয়া উপস্থিত ছিলেন। আসামি আবদুল ওহিদ পলাতক।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর সকালে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী। স্কুল ছুটির পরও সে বাড়ি না ফিরলে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। এর মধ্যে স্থানীয় এক ভ্যানচালকের মাধ্যমে ওই স্কুলছাত্রীর বাবা জানতে পারেন, তারামনির সঙ্গে তাঁর মেয়ে বদরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াগঞ্জ গেছে।
এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর মামলা করেন ওই স্কুলছাত্রীর বাবা। এরপর ওই বছরের ১১ নভেম্বর তাকে উদ্ধার করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদরগঞ্জ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক কমল মোহন ২০১৬ সালের ১০ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আট বছর ধরে মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ বিচারক রায় দেন।
ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তারামনি ওই স্কুলছাত্রীকে ওহিদের কাছে তুলে দেয়। ওহিদ ওই ছাত্রীকে ঢাকায় একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে তিনি ইয়াসমিনের কাছে বিক্রি করে দেন তাকে। ইয়াসমিন ওই ছাত্রীকে কিশোরগঞ্জ ভৈরব এলাকার একটি যৌনপল্লিতে থাকতে বাধ্য করেন। এর কিছুদিন পর ইয়াসমিন ওই ছাত্রীকে অন্য জায়গায় বিক্রির চেষ্টা করলে কৌশলে সে পালিয়ে যায় এবং বাসে এক নারীকে ঘটনাটি খুলে বলে। পরে ওই নারী বিষয়টি থানায় জানালে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।