শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে তথ্য চাইতে গিয়ে অসদাচরণের অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড পাওয়া সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা ভ্রাম্যমাণ আদালতে দোষ স্বীকার করেননি বলে দাবি করেছেন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জামিনে মুক্তির পর এক প্রতিক্রিয়া তিনি এ দাবি করেন।
শফিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোবাইল কোর্টে সাজা দেওয়ার আগে আমাকে সরি বলার জন্য বলেছিল। আমি বলছি, আমি কোনো অপরাধ করিনি, আমি এখানে তথ্য অধিকার ফরমে আবেদন নিয়ে আসছি। আমি কোনো সরি বলতে পারব না। এরপর ওসিকে ফোন দেয়। আমি ও আমার বড় ছেলে সিসি ক্যামেরার নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর ওসি সিভিল কাপড়ে এসে আমাকে নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি, ভুল স্বীকারও করেননি। তিনি তাঁর জায়গায় অবিচল আছেন।
আজ দুপুরে সাংবাদিক শফিউজ্জামানের কারাদণ্ড দেওয়ার বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) আব্দুল্লাহ আল খায়রুমের আদালতে আপিল করেন আইনজীবী মো. আবদুর রহিম। আপিলে আইনজীবী উল্লেখ করেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে শফিউজ্জামানকে দেওয়া সাজা বিধিসম্মত হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে শফিউজ্জামান দোষ স্বীকার করেননি। এ জন্য সাজার আদেশ রহিত ও বাতিলের আবেদন জানান আইনজীবী। ডিএম আবদুল্লাহ আল খায়রুম আপিলটি গ্রহণ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জেবুননাহারের আদালতে পাঠান।
বিকেলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে শুনানি শেষে তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শফিউজ্জামান কারাগার থেকে মুক্তি পান। শফিউজ্জামান দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার নকলা উপজেলা সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত। ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া সাজায় ৫ মার্চ থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
ইউএনওর দপ্তরে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শফিউজ্জামান বলেন, তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাইতে ৫ মার্চ বড় ছেলে শাহরিয়ার জাহানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ইউএনওর দপ্তরে যান। তিনি তথ্য অধিকার আইনে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও জাইকার কয়েকটি প্রকল্পের বিষয়ে তথ্য চেয়ে আবেদন করেন এবং রিসিভড কপি চান। এতে ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন তাঁর (শফিউজ্জামান) ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শিহাবুল আরিফকে ডেকে এনে ইউএনওর দপ্তরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাঁকে (শফিউজ্জামান) দুটি ধারায় কারাদণ্ড দেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো।
এ বিষয়ে গত শনিবার ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন বলেছিলেন, ‘সাংবাদিক রানা তথ্য চেয়ে আবেদন করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি তখনই তথ্য চান। আমি তাঁকে বলি, এখন আমার মিটিং আছে। তথ্য দেওয়ার জন্য আমার হাতে ২০ দিন সময় আছে। কিন্তু রানা সিএ শীলার কাছে থাকা তথ্যের ফাইল টানাটানি করেন এবং নানা ধরনের অশালীন ভাষায় কথাবার্তা বলেন। তিনি অসদাচরণ করেছেন। এতে অফিসের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তাই আমি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলেছি।’
সাংবাদিক শফিউজ্জামান প্রথম আলোর কাছে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তাঁর মুক্তির জন্য শেরপুর, নকলাসহ সারা দেশের সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তাঁকে সাজা দেওয়ার পর তথ্য কমিশন দ্রুত অনুসন্ধানের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সে জন্য তথ্য কমিশনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।