চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে রপ্তানিযোগ্য আমের বাগান আজ বৃহস্পতিবার ঘুরে দেখলেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা। তাঁরা উত্তম কৃষিচর্চার (গ্যাপ) মাধ্যমে চাষ করা আম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের এ উদ্যোগকে তাঁরা প্রশংসা করেছেন। এসব আম তাঁদের দেশে রপ্তানির ব্যাপারে আগ্রহও প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সুস্বাদু ও সম্ভাবনাময় আম রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে নিরাপদ আমের উৎপাদন কার্যক্রম ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতদের কাছে তুলে ধরতে আমবাগান পরিদর্শনের এই আয়োজন করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
দুপুরে ব্রুনেই দারুস সালাম, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, স্পেন, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভুটান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও লিবিয়ার হাইকমিশনার, রাষ্ট্রদূত, মিশনপ্রধানসহ প্রায় ২০টি দেশের কূটনীতিকেরা ছিলেন এই দলে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. আবদুল ওয়াদুদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমান, কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার প্রমুখ। এ ছাড়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধিও এ দলে ছিলেন। তাঁরা নাচোলের কেন্দবোনা গ্রামে পুরস্কারজয়ী আমচাষি রফিকুল ইসলামের একটি আমবাগান ঘুরে দেখেন।
আমচাষি রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ফার্মি অ্যাগ্রো নামের আমবাগানটি ১৪০ বিঘার। পুরো বাগানেই রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে গত বছর থেকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে তিন বিঘার বাগানে বারি আম-৩ ও বারি-৪ আমের বাগানও করেছেন। প্রথমবারের মতো বিদেশি কূটনীতিকদের উচ্চপর্যায়ের একটি দল চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমবাগান পরিদর্শন করলেন। এতে স্থানীয় আমচাষিসহ উদ্যোক্তারা খুব খুশি। এর মাধ্যমে দেশের আম রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ বলেন, ‘বাংলাদেশের আম স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এবং বিদেশেও জনপ্রিয়। প্রতিবছর দেশ থেকে লক্ষাধিক টন আম রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা মাত্র তিন হাজার টনের মতো রপ্তানি করতে পারি। এ ক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল উত্তম কৃষিচর্চা বা গ্যাপ অনুসরণ না করা। সে জন্য গ্যাপ মেনে আমরা নিরাপদ আম উৎপাদন শুরু করেছি। আজ বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার, রাষ্ট্রদূতসহ কূটনীতিকেরা এ কার্যক্রম ঘুরে দেখেছেন। আমরা বেশি পরিমাণ আম রপ্তানির চেষ্টা করছি। এ পরিদর্শনের মাধ্যমে বিদেশি কূটনীতিদের উৎসাহিত করছি, যাতে বেশি পরিমাণ আম রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। আমি মনে করি, এ পরিদর্শনের ফলে আম রপ্তানি বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।’
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র— এই তিন মন্ত্রণালয় মিলে আমরা আমাদের আমকে বিদেশে ব্র্যান্ডিং করব। যাতে বিদেশে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পায়। আম রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের বহু সমস্যা আছে, থাকতে পারে। গ্যাপ না থাকলে চাইলেই বিদেশে আম রপ্তানি করা যায় না। গ্যাপ বাস্তবায়নে আমরা শুরু করেছি। সামনে কোনো সমস্যা থাকবে না।’
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের আমের কোয়ালিটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রতিটি দেশেরই একটা নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড আছে। গ্যাপ মেনে আম উৎপাদন করতে পারলে বিশ্বের সব দেশেই আম রপ্তানি করা যাবে।’
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ৩৮টি দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে। যদিও এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমের রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ১০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছে।