পঞ্চগড় শহরে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ, পানিবন্দী মানুষের বিক্ষোভ

কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতেই পঞ্চগড় পৌর শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। শনিবার বিকেলে শহরের কামাতপাড়া এলাকার রৌশনাবাগ-নুরুন আলা নুর কামিল মাদ্রাসা সড়কে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ভারী বর্ষণে নাকাল হয়ে পড়েছে দেশের সর্ব–উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের জনজীবন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। এতে অনেক বাড়িঘরে পানি ওঠায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে পরিবারগুলো। ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি এই জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে পঞ্চগড় পৌরসভার অপরিকল্পিত ড্রেনেজ–ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী মানুষ। পানি নামতে না পারলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

এদিকে পঞ্চগড় পৌরসভার কামাতপাড়া এলাকার পানিবন্দী মানুষেরা জলাবদ্ধতার প্রতিকারের দাবিতে আজ শনিবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা জেলা শহরের বানিয়াপট্টি এলাকায় পঞ্চগড়-টুনিরহাট সড়কে এ বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দেন পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসনাত মো. হামিদুর রহমান।

খবর পেয়ে পঞ্চগড় পৌর মেয়র জাকিয়া খাতুন ঘটনাস্থলে এসে ক্ষুব্ধ মানুষদের শান্ত করেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন বানিয়াপট্টি কালভার্টের মুখে বাঁশ ও বালুর বস্তা ফেলে পানি গতিরোধের চেষ্টা করেন।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তেঁতুলিয়ায় ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টি থেমে থেমে চলেছে আজ বেলা আড়াইটা পর্যন্ত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃষ্টিপাতের যে শ্রেণিবিভাগ করে, সেই অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা বৃষ্টি বলে। বৃষ্টি যদি ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার হয়ে, তবে তা মাঝারি ধরনের বৃষ্টি। আর যদি ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার হয়, তবে সেই বৃষ্টিকে বলে মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টিপাত। আর ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটারের বৃষ্টি হচ্ছে ভারী বৃষ্টি। যদি ৮৮ মিলিমিটারের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়, তবে তা অতি ভারী বৃষ্টি হিসেবে ধরা হয়।

আজ দুপুর থেকে বিকেলে পঞ্চগড় পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিপাতে শহরের কামাতপাড়া, কায়েতপাড়া, নিমনগর, পৌরখালপাড়া, তেলিপাড়া, পূর্ব জালাসী-হঠাৎপাড়া, উত্তর জালাসীসহ বিভিন্ন বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন নিচু এলাকাগুলোর বাড়িঘরে পানি উঠেছে। এতে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার ভোগান্তিতে পড়েছে।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, জেলা শহরের পঞ্চগড় বাজার, রৌশনাবাগ, ইসলামবাগ, কায়েতপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার পানি শহরের বানিয়াপট্টি এলাকার কালভার্ট দিয়ে কামাতপাড়া হয়ে করতোয়া নদীতে চলে যায়; কিন্তু অপরিকল্পিত ড্রেনেজ–ব্যবস্থা ও পানি দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার পথ না থাকায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে ড্রেনের ওপর স্ল্যাব না থাকায় দুর্ঘটনারও শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।

জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে পঞ্চগড় পৌরসভার অপরিকল্পিত ড্রেনেজ–ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী মানুষ। শনিবার বিকেলে পৌর শহরের কামাতপাড়া এলাকার বানিয়াপট্টি-তুলারডাঙ্গা সড়কে তোলা

কামাতপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলেয়া বেগম (৫০) বলেন, ‘বৃষ্টির পানি বের হয়ে যাওয়ার কোনো পথ নেই। ছোট ছোট ড্রেন দিয়ে পানি যেতে না পারায় বাড়িতে হাঁটুপানি জমেছে। ঠিকমতো রান্না করতে পারছি না, টয়লেটেও যেতে পারছি না। খুব কষ্টে আছি আমরা।’

মো. মানিক নামের কামাতপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘শহরের রৌশনাবাগ, ইসলামবাগসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জমে থাকা পানি বানিয়াপট্টি কালভার্ট দিয়ে কামাতপাড়ার ওপর দিয়ে যায়; কিন্তু এই ড্রেনগুলো ছোট হওয়ায় আর কিছু লোক ড্রেনে ময়লা ফেলায় পানি ঠিকমতো যেতে পারছে না। এ জন্য প্রতিবছর বর্ষা এলেই আমাদের কামাতপাড়ার লোকজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমরা এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে পৌরসভার বেশ কয়েকটি এলাকায় সহস্রাধিক পরিবার জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছে। ভোগান্তির শিকার এসব মানুষের জন্য শুকনো খাবার এবং পৌরসভায় খিচুড়ি রান্না করে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

মেয়র  আরও বলেন, ‘পঞ্চগড় পৌরসভায় প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থায় চলছে। এ ছাড়া কামাতপাড়া নিচু এলাকা হওয়ায় সেদিক দিয়ে পুরো শহরের বৃষ্টির পানি করতোয়া নদীতে চলে যেত। ওই এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর গড়ে ওঠায় এবং ড্রেনগুলোতে ময়লা–আবর্জনা ফেলায় পানি যেতে পারছে না। এ জন্যই এ ধরনের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে এই সমস্যা সমাধানে আমরা একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছি। সেই প্ল্যান ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে জমাও দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে আটটি বড় ড্রেন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।’