নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতি সপ্তাহে কৃষকের বাজার বসছে। প্রতি শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কৃষকের বাজারে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য এনে নিজেরাই সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। এতে নগরবাসী বিষমুক্ত সবজি কিনতে পারছেন। এ বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মো. তাজুল ইসলামের সঙ্গে।
প্রথম আলো: কৃষকের বাজার উদ্যোগের বিষয়টি কীভাবে এখানে শুরু হলো?
তাজুল ইসলাম: কৃষকের বাজার নারায়ণগঞ্জে প্রথম নয়। ঢাকায়ও কৃষকের বাজার আছে। সেখানে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য এনে নিজেরাই সরাসরি বিক্রি করছেন। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং ওয়ার্ক ফর অ্যা বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে ১২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২টি কৃষকের বাজার বসানো হয়েছে। এ বাজারে নির্ধারিত কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত সবজি নিজেরাই এনে বিক্রি করতে পারছেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় কৃষকেরা সরাসরি পণ্য বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
প্রথম আলো: কৃষক কীভাবে বাছাই করা হয়েছে?
তাজুল ইসলাম: কৃষক বাছাইয়ের বিষয়টি শুরু থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যাঁরা কৃষির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে আগ্রহী, তাঁদের বাছাই করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী এলাকার কৃষকদের সবজি চাষের জন্য বাছাই করা হয়েছে। বাছাই করা এসব কৃষকদের নিরাপদ সবজি চাষের বিষয়ে কৃষি বিভাগ এবং ওয়ার্ক ফর অ্যা বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো: কীভাবে আপনারা ফসল উৎপাদনের বিষয়টি তদারকি করছেন?
তাজুল ইসলাম: জমিতে ফসল রোপণ, বালাইনাশক প্রয়োগ ও ফসল উৎপাদন পর্যন্ত পুরো বিষয়টি বক্তাবলী ইউনিয়নের তিনজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তদারকি করেন। তাঁরা কৃষিজমি পরিদর্শন ও কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কৃষক কখন কী ফসল রোপণ করছেন, কখন বালাইনাশক প্রয়োগ করছেন, কবে জমি থেকে ফসল ওঠাবেন—সেসব বিষয় তাঁরা ডায়েরিতে লিখে রাখেন এবং মনিটরিং করেন।
প্রথম আলো: ফসল বিষমুক্তের নিশ্চয়তা কীভাবে দিচ্ছেন?
তাজুল ইসলাম: সবজি পরীক্ষার জন্য আমাদের নিজস্ব কোনো পরীক্ষাগার নেই। বালাইনাশক পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগের ৭ থেকে ১০ দিন পর জমি থেকে ফসল তোলা হয়। ওই সময়ের পর জমি থেকে ফসল তোলা হলে কৃষিবিজ্ঞানমতে ফসলে বালাইনাশকের উপস্থিতি থাকে না। এর ফলে মানুষের শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না।
প্রথম আলো: বাজারের অন্য সবজির সঙ্গে আপনাদের সবজির পার্থক্য কী?
তাজুল ইসলাম: বাজারে যে সবজি পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো কীটনাশক বা বালাইনাশক প্রয়োগের নির্দিষ্ট সময় পর আনা হয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। যেহেতু কৃষকেরা আমাদের তত্ত্বাবধানে নির্দেশনা মেনে ফসল উৎপাদন, বালাইনাশক প্রয়োগ ও বাজারজাত করছেন, তাই এই সবজি নিরাপদ। এতে ক্ষতিকর কিছু নেই বলে আমরা ধরে নিতে পারি।
প্রথম আলো: এ পদ্ধতিতে ফসলের উৎপাদন কেমন হয়? কৃষকের খরচ কী বেশি পড়ে?
তাজুল ইসলাম: এই পদ্ধতিতে ফসলের উৎপাদন কম হওয়ার কারণ নেই। কৃষকেরা কীটনাশক ব্যবহার পরিমিত মাত্রায় করছেন। এতে তাঁদের উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে না। তবে কৃষকদের এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন ও বাজারজাত করার ব্যাপারে প্রকল্প সংস্থা থেকে সবজি পরিবহনে গাড়ি–সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আগে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করতেন, এতে তাঁরা কম দাম পেতেন। এখন কৃষক নিজেরাই সরাসরি ক্রেতাদের কাছে খুচরা বাজারমূল্যে বিক্রি করছেন। কৃষক আগের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। আগে বক্তাবলীতে ১টি কচু কৃষকেরা ২০ টাকায় বিক্রি করতেন। এখন সেই কচু কৃষকেরা খুচরা বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রেও তাঁরা ভালো দাম পাচ্ছেন।
প্রথম আলো: ফসলে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে?
তাজুল ইসলাম: কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াও ফসলের পোকামাকড় দমনের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। যেমন সেক্র ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ আঠার ফাঁদ, হাতে পোকা দমন ইত্যাদি। এসব পদ্ধতির সঙ্গে পরিমিত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করা যায়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। এতে ফসলের উৎপাদন কমে না।
প্রথম আলো: এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনে অন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে?
তাজুল ইসলাম: আমরা এই পদ্ধতিতে অন্য কৃষকদেরও ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করছি।