পরামর্শকের অনুরোধে ২০০ শিক্ষার্থী একযোগে চোখ বন্ধ করল। তিনি বলেন, ‘এবার তোমরা প্রত্যেকের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির কথা ভাবো, তার মুখ কল্পনা করো, তার অভিব্যক্তির কথা মনে করো। কেউ চোখ খুললেই প্রমাণ হবে, সে তার ভালোবাসার মানুষের প্রতি অসম্মান করছে।’ এক মিনিট পার হয়ে যায় কেউ চোখ খোলে না। পরামর্শক বলে উঠলেন, ‘এবার তোমরা ভাবো, তোমার ভালোবাসার মানুষটি গাঁজা খাচ্ছে।’
এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে একযোগে সবাই চিৎকার করে বলে উঠল—‘না’।
এবার পরামর্শক বললেন, ‘কল্পনায় ভালোবাসার মানুষের মাদক সেবনের কথাই তোমরা মেনে নিতে পারছ না। এখন তোমরা যদি কখনো মাদক সেবন করো, তাহলে তোমাদের যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের কী কষ্ট হবে, একবার চিন্তা করো।’ মাদকের এই ভয়াবহতা বুঝতে পেরে একযোগে সব শিক্ষার্থী মাদককে না বলল। সেই সঙ্গে তারা মিথ্যা, মনখারাপ ও না বুঝে মুখস্থকেও না বলার শপথ নিল। বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীদের মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করতে এই পরামর্শমূলক সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তানজির আহম্মদ ও বরেন্দ্র মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। স্বাগত বক্তব্য দেন কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নূর জাহান বেগম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন রাজশাহী বন্ধুসভার সভাপতি সাব্বির আহমেদ খান। সমাপনী বক্তব্য দেন প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম প্রশ্ন ছিল, পরীক্ষায় খারাপ করলে মন ভালো করার জন্য অনেকেই সিগারেট সেবন করেন। সিগারেট কি আসলে কোনো সমাধান? এ প্রশ্নের উত্তরে পরামর্শক তানজির আহম্মদ ও শহিদুল আলম বলেন, সিগারেট কোনো সমাধান নয়, পরীক্ষা খারাপ হয়েছে বলে এক মাস মন খারাপ করে থেকেও কোনো লাভ নেই। বরং পরে যদি আর মন খারাপ না হয়, তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াই হচ্ছে সঠিক সিদ্ধান্ত।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম প্রশ্ন ছিল, পরীক্ষায় খারাপ করলে মন ভালো করার জন্য অনেকেই সিগারেট সেবন করেন। সিগারেট কি আসলে কোনো সমাধান?
এ প্রশ্নের উত্তরে পরামর্শক তানজির আহম্মদ ও শহিদুল আলম বলেন, সিগারেট কোনো সমাধান নয়, পরীক্ষা খারাপ হয়েছে বলে এক মাস মন খারাপ করে থেকেও কোনো লাভ নেই। বরং পরে যদি আর মন খারাপ না হয়, তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াই হচ্ছে সঠিক সিদ্ধান্ত।
এ সময় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী দ্বীপায়ন সরকার প্রশ্ন করে বসে, পরীক্ষার পর একমাত্র চিন্তা শুরু হয়, মা–বাবা কী বলবে। এই টেনশন থেকে মুক্তির উপায় কী? পরামর্শকেরা বলেন, মা–বাবাকে বুঝিয়ে বলতে হবে, পরেরটা আর খারাপ হবে না। সচেতনতা সৃষ্টি হলে এ ধরনের বকাঝকা কমে যাবে। আগেই ভয়ে অস্থির হওয়ার দরকার নেই। একান্তই তা সম্ভব না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
যে মাদক নিতে বলে, সে ভালো বন্ধু নয়—এ কথা শুনে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমান ফার্সী প্রশ্ন করে, ‘ভালো বন্ধু কোথায় পাব?’ পরামর্শকেরা বলেন, ‘যে তোমাকে ভালো কাজের পরামর্শ দেয়, খারাপ কাজ করতে নিষেধ করে, সে–ই তোমার ভালো বন্ধু। এক দিন খেলে কোনো ক্ষতি হবে না, এ পরামর্শ সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। যে এ পরামর্শ দেবে, সে–ও তোমার বন্ধু নয়।’
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসনুন আবরারের প্রশ্ন ছিল, মাদকের কোনো ভালো দিক আছে কি না। এ প্রশ্নের জবাবে পরামর্শকেরা বলেন, নেশা করার জন্য মাদকের আবিষ্কার করা হয়নি। এগুলো চিকিৎসাক্ষেত্রে কাজে লাগে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কেউ কোনো অসুখের জন্য মাত্রা অনুযায়ী সেবন করে, তাহলে তাতে কোনো ক্ষতি হবে না।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্ক অর্ণব জানতে চায়, পান–সুপারি মাদকের মধ্যে পড়ে কি না। একই শ্রেণির শিক্ষার্থী তৌকিত আহমদ জানাতে চায়, মুঠোফোনে আসক্তি মাদকের মতোই ক্ষতিকর কি না। আবরার শাহরিয়ার জানতে চায়, মন জিনিসটা কী? মুখে কথা বললে বাগ্যন্ত্রের ব্যবহার হয়, মনে মনে কথা বললে কোনো বাগ্যন্ত্রের ব্যবহার হয় কি না। মঞ্চের দুই বিশেষজ্ঞ পরামর্শক শিক্ষার্থীদের সব কৌতূহল মিটিয়ে তাদের কাছ থেকে মাদক, মিথ্যা, মনখারাপ ও না বুঝে মুখস্থকে না বলার শপথ আদায় করে নেন। তারা দুই হাত তুলে এ শপথ নেয়।
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নূর জাহান বেগম বলেন, নিজেকে ভালো বাসতে হবে। যে নিজেকে ভালোবাসে, সে কোনো খারাপ কাজ করতে পারবে না। প্রিয়জনদের কথাও ভাবতে হবে। বিশেষ করে মায়ের কথা বারবার ভাবতে হবে। শেষে চমৎকার অনুষ্ঠান আয়োজন করতে তাঁর প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেওয়ার জন্য তিনি প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান।