কুমারখালীতে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে একজন নিহত, বাড়িঘর ভাঙচুর

কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলায় ছুরিকাঘাতে নিহতের স্বজনদের আহাজারি। শনিবার উপজেলার কমরকান্দি গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আবদুর রাজ্জাক (৫৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কমরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত পাঁচজন। ঘটনার পর থেকে এলাকার অন্তত ৮ থেকে ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।

নিহত আবদুর রাজ্জাক কমরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উপজেলার গোপগ্রাম ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী ছিলেন। নিহত ব্যক্তির ছেলে আবদুর রাশেদসহ (২৫) আহত ব্যক্তিদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে কমরকান্দি গ্রামের এক বাড়িতে চোর ঢোকে। চোরের উপস্থিতি টের পেয়ে কমরকান্দি গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যপ্রার্থী ফিরোজ খাঁর লোকজন চোরকে ধাওয়া দেন। এ সময় ওই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আবদুস সাত্তারের লোকজন চোরকে আশ্রয় দেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরাজিত ও বর্তমান ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।

ঘটনার পর থেকে এলাকার অন্তত ৮ থেকে ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। শনিবার কুমারখালী উপজেলার কমরকান্দি গ্রামে

এলাকাবাসী জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সমঝোতার জন্য আজ সকালে কমরকান্দি বাজারে দুই পক্ষ বৈঠকে বসে। বৈঠক চলাকালে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ফিরোজ খাঁর সমর্থকেরা আবদুস সাত্তারের সমর্থক আবদুর রাজ্জাককে ছুরিকাঘাত করেন। সংঘর্ষ বাধলে অন্তত পাঁচজন আহত হন। তাঁদের সবাইকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুর রাজ্জাককে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষ এড়াতে সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে বর্তমান ইউপি সদস্য আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে চোরকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ নিয়ে আজ সকালে বৈঠকের কথা বলে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে শতাধিক লোকের সামনে ছুরিকাঘাত করে আবদুর রাজ্জাককে হত্যা করা হয়েছে। হামলায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য প্রার্থী ফিরোজ ও তাঁর সমর্থকেরা এলাকাছাড়া। এ ব্যাপারে ফিরোজ খাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর সমর্থক মন্টু মিয়ার স্ত্রী খালেদা খাতুন বলেন, ‘ছাত্তার মেম্বারের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে। তারা বাড়ি থেকে অর্থ-সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে।’ তবে তিনি নিহতের ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।

কুমারখালীতে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করেছে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে। লাশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হবে। জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।