ধর্ষণবিরোধী প্ল্যাকার্ড
ধর্ষণবিরোধী প্ল্যাকার্ড

চোখে-মুখে এভাবে আঠা লাগানো রোগী দেখেননি চিকিৎসকেরা

খুলনার পাইকগাছায় চোখে-মুখে আঠা লাগিয়ে দেওয়া গৃহবধূ (৪৫) হাসপাতালে ভর্তি আছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, এমন রোগী তাঁরা দেখেননি। ওই নারীর চোখ ও মুখের আঠা অপসারণ করা হলেও শারীরিকভাবে দুর্বল থাকায় তিনি কথা বলতে পারছেন না। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট-২-এর সহকারী রেজিস্ট্রার চিকিৎসক মো. কনক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে যখন আনা হয়, তখন ওই রোগী পুরোপুরি অজ্ঞান ছিলেন তেমন নয়। তবে তিনি একটু অবচেতন অবস্থায় ছিলেন। চোখের পাতা ও দুই ঠোঁট শক্ত আঠা দিয়ে লাগানো ছিল। রোগীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঁচড়ের দাগ ও ছোট ছোট আঘাতের চিহ্ন ছিল। অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে আঠা অপসারণ করা হয়। এরপর রোগীকে পাঠানো হয় চক্ষু ওয়ার্ডে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ছিল, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাই চক্ষু ওয়ার্ড থেকে তাঁকে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়। তবে এর আগে কখনো চোখে ও মুখে এভাবে আঠা লাগানো অবস্থায় কোনো রোগী তাঁরা দেখেননি।

আজ সকালে ওই নারীর ছেলে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সোমবার রাতে তাঁর মায়ের জ্ঞান ফিরেছে। তবে তিনি কথা বলতে পারছেন না। কিছু বলতে গেলে ইশারা করছেন। তাঁর মায়ের শরীর এখনো বেশ দুর্বল।

গতকাল সকালে খুলনার পাইকগাছায় গৃহবধূর প্রতিবেশীরা হাত-পা বাঁধা ও চোখে-মুখে শক্ত আঠা লাগানো অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকেরা তাঁর চোখ ও মুখের আঠা অপসারণ করেন। ধর্ষণের আলামত সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গৃহবধূর স্বামী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্ত্রী কথা বলতে না পারায় প্রকৃত ঘটনা কী হয়েছিল, তা বুঝতে পারছেন না তাঁরা। এই মুহূর্তে তাঁরা কাউকে সন্দেহও করতে পারছেন না। তাঁর স্ত্রীর শরীরে থাকা স্বর্ণের কানের দুল, গলার চেইনসহ বেশ কিছু স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে। সবাই হাসপাতালে থাকায় বাড়িতে কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছেন না তাঁরা। কান থেকে দুল টেনে নেওয়ায় দুই কানের লতি কেটে গেছে। সেখানে চিকিৎসকেরা সেলাই করে দিয়েছেন।

গৃহবধূর স্বামী আরও বলেন, তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। শনি ও বুধবার ছাড়া অন্য দিন তিনি বাড়ির বাইরে থাকেন। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে খুলনায় থেকে লেখাপড়া করে। গত রোববার ঘটনার রাতে তিনি বাড়িতে ছিলেন না।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও ওসিসির সমন্বয়কারী সুমন রায় প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুরে ওই গৃহবধূকে ওসিসিতে নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যেহেতু ওই রোগী শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই তাঁকে আবার সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।

পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান আজ বলেন, ওই ঘটনায় কেউ মামলা করেননি। তবে অপরাধীদের শনাক্ত করতে অভিযান অব্যাহত আছে।

খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। এখনো কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পাওয়ামাত্রই সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপারটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।