পাবনার সুজানগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিনুজ্জামানসহ ১১ জনকে আটক করেছে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রায় ২৩ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চর ভবানীপুর গ্রাম থেকে তাঁদের আটক করা হয়। পরে রাত সোয়া তিনটার দিকে র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানায়।
এদিকে ওই ঘটনার খবর পেয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিনুজ্জামানের সমর্থকেরা রাত একটার দিকে সুজানগর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁরা থানার সামনেই ছিলেন।
পাবনা শহরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের কমান্ডার মো. এহতেশামুল হক খান জানান, র্যাবের একটি দল সুজানগর উপজেলা টহলে ছিল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে টহল দলটি একটি গাড়ি আটক করে তল্লাশি চালায়। গাড়িতে নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহিনুজ্জামানসহ ১১ জনকে পাওয়া যায়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ২২ লাখ ৮২ হাজার ৭০০ টাকা জব্দ করা হয়।
কমান্ডার এহতেশামুল হক খান আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিনুজ্জামান ভোটারদার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে টাকা ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কমিশনের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিনুজ্জামানকে আটকের ঘটনায় তাঁর সমর্থকেরা সমবেত হতে শুরু করেন। রাত একটার দিকে তাঁরা সুজানগর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে হাজির হন।
আজ মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। কয়েক শ মানুষ থানার সামনের রাস্তায় শুয়ে আছেন, বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের শান্ত করে বাড়ি ফেরানোর চেষ্টা করছি।’
তবে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জালাল উদ্দীন জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিনুজ্জামানের সমর্থকেরা রাত থেকে থানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন। সকালে তাঁদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রথম দফায় কাল বুধবার সুজানগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহব এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিনুজ্জামান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পদ্মার বালুমহাল দখলসহ নানা বিষয় নিয়ে দুজনের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুজনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি হুমকির অভিযোগ তুলছেন। গত ২৩ এপ্রিল ও গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত সাতজন আহত হন।