ময়মনসিংহের ধোবাউড়া মধ্যবাজারে গতকাল বুধবার একটি গুদাম সিলগালা করে দেওয়া হয়
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া মধ্যবাজারে গতকাল বুধবার একটি গুদাম সিলগালা করে দেওয়া হয়

সরকারি প্রণোদনার সার বিএনপি নেতার গুদামে

কৃষকের জন্য বরাদ্দ বিনা মূল্যের প্রণোদনার সার সরকারি গুদামে থাকার কথা। তবে সেই সার পাওয়া গেছে বিএনপি নেতার গুদামে। এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়ায়। খবর পেয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন গুদামটি সিলগালা করে দিয়েছেন।

নিশাত শারমিন জানান, সরকারি সার বাইরের গুদামে ছিল। এ বিষয়ে ডিলারও সদুত্তর দিতে পারেননি। ওই অবস্থায় গুদামটি সিলগালা করা হয়েছে। সেখানে কীভাবে সার গেল, তা কৃষি কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকেও জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রণোদনার দুই ট্রাক সার বিএডিসি থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে। দুই ট্রাকে এমওপি ও ডিএপি ৬৩০ বস্তা সার ছিল। ৩ নভেম্বর এসব সার সরকারি গুদামে যাওয়ার কথা ছিল। তবে ৩১৫ বস্তার এক ট্রাক সার যায় বিএনপি নেতা মাজহারুল আহসানের গুদামে।

মাজহারুল আহসান ধোবাউড়া থানা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ। বর্তমানে এলাকায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দলীয় কোনো পদ নেই। ধোবাউড়া মধ্যবাজারে মেসার্স আর এম ট্রেডার্স নামে তাঁর একটি সারের দোকান রয়েছে এবং তিনি বিএডিসির সার ডিলার। তাঁর গুদামে ৩১৫ বস্তা সরকারি সার পাওয়া গেছে। গতকাল বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই গুদামে অভিযান চালান। পরে গুদামটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে মাজহারুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঠে চাহিদা থাকলেও আমার গুদামে এমওপি সারের সংকট ছিল। এ খবর জেনে কৃষি কর্মকর্তা এক ট্রাক সার আমার গুদামে পাঠিয়ে দেন। আমি তখন কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নিজের বরাদ্দ উত্তোলনের পর সমপরিমাণ সার কৃষি কর্মকর্তাকে দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। আমার গুদামে সার রাখলেও পরে প্রকৃত কৃষকদের স্লিপ দিয়ে সার তুলে নিতেন কৃষি কর্মকর্তা। আমি কৃষি কর্মকর্তার কাছে এখনো সাত লাখ টাকা পাই, যা দীর্ঘদিনে জমেছে। অফিসে সার রাখলে উনি (কৃষি কর্মকর্তা) অনেক ঝামেলায় থাকেন। আমার এখান থেকে কৃষকদের সার দিতে সহজ হয়।’

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। ব্যস্ততার কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাছরিন আক্তার বানু বলেন, ‘বিষয়টি শোনার পর আমরা খোঁজখবর নিতে শুরু করেছি। যাঁর গুদামে রাখা হয়েছে, সেটিও বিএডিসির। ডিলারেরও এক ট্রাক সার আসার কথা ছিল। এখানে ট্রাকের উল্টাপাল্টা হয়েছে। পরের ট্রাকটি কৃষি কর্মকর্তার কাছে দেওয়ার কথা ছিল। সরকারি গুদামে জায়গা না থাকায় অনেক সময় বাইরেও সার রাখা হয়।’