জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার শিকটা গ্রামের বৃদ্ধ সৈয়দ আলী আকন্দ (৮০) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। ঘরে ঢুকে টাকা লুট করার সময় দুর্বৃত্তদের চিনে ফেলায় তাঁরা বৃদ্ধকে গলায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন এমন দাবি পুলিশের।
এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন নিহত বৃদ্ধের আত্মীয় ও আরেকজন গ্রাম পুলিশ রয়েছে। জমির দলিল ও ৬২ হাজার ৫০০ টাকা ও এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার বেলা দেড়টায় সংবাদ সম্মেলনে জয়পুরহাটের পুলিশ মোহাম্মদ নুরে আলম এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের শিকটা গ্রামের আকামুদ্দিনের ছেলে হারুনুর রশিদ, একই গ্রামের আবু তালেব ফকিরের ছেলে সুজন মিয়া, মোবারক আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ আলীর ছেলে নাজির হোসেন। এঁদের মধ্যে হারুনুর রশিদ বৃদ্ধের শ্যালকের ছেলে এবং সুজন মিয়া গ্রাম পুলিশ। মোস্তাফিজুর ও নাজির একই গ্রামের বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ১ ডিসেম্বর সকালে কালাই শিকটা গ্রামের সৈয়দ আলীর নিজ শয়ন ঘরের মধ্যে তাঁর গলাকাটা লাশ পড়ে আছে বলে খবর আসে। পুলিশ গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাতাপালের মর্গে পাঠায়। পরে আমাদের তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে জানা যায় গত ৩০ নভেম্বর দিবাগত গভীর রাতে অজ্ঞাত আসামিরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ বিষয়ে কালাই থানায় মামলা হয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে তৎপরতা শুরু করে। সৈয়দ আলী হত্যাকাণ্ডে শিকটা গ্রামের হারুনুর রশিদ জড়িত রয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জড়িত অন্যদের নাম বলেন। এরপর সুজন, মোস্তাফিজুর, নাজিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসপি মোহাম্মদ নুরে আলম বলেন, আসামিরা পুনট বাজারে নাজিরের দোকানে বসে সৈয়দ আলী আকন্দের কাছে থাকা টাকা লুটের পরিকল্পনা করেন। লুটের টাকায় আসামি নাজির ব্যবসা করে অন্যদের লভ্যাংশ দেবেন। সেই পরিকল্পনায় তাঁরা ধারালো ছুরিসহ সৈয়দ আলী আকন্দের বাড়িতে ঢুকে টাকা লুট করতে যান। তাঁরা সৈয়দ আলীর ঘরের স্টিলের বাক্সের লক ভেঙে দুই লাখ টাকা এবং একটি প্লাস্টিকের বাজার করা ব্যাগের ভেতর থাকা দলিল নেন। এ সময় বৃদ্ধ সৈয়দ আলী আকন্দ তাঁদের চিনে ফেলেন। তখন বৃদ্ধ চিৎকার দেন। হারুনুর রশিদের হাতে থাকা ছুরি নিয়ে গ্রাম পুলিশ সুজন বৃদ্ধের গলায় ছুরিকাঘাত করে টাকা ও জমির দলিল নিয়ে পালিয়ে যান। রক্তক্ষরণে বৃদ্ধ সৈয়দ আলী আকন্দের মৃত্যু হয়।
এসপি বলেন, বৃদ্ধের ঘর থেকে ২ লাখ টাকা ও জমির দলিল লুট করেছিল। মূলত টাকার ব্যাগ ভেবে জমির দলিল নিয়েছিল। পরে দলিল দেখতে পেয়ে ব্যাগটি গ্রামের একটি পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। লুট হওয়া ২ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ৬২ হাজার টাকা ও দলিলের ব্যাগ পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।