নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় মা ও মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়েরকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে জেলা শহর মাইজদী থেকে তাঁকে জেলা পুলিশের একটি দল গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার আবুল খায়ের সুবর্ণচরের চর ওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য।
আবুল খায়েরকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর অভিযুক্ত আবুল খায়েরসহ অন্য দুই আসামি আত্মগোপনে চলে যান। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ বিকেল চারটার দিকে জেলা শহর মাইজদী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া মামলার এজাহারভুক্ত অপর এক আসামিসহ বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের জেলা পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন পুলিশ সুপার।
এদিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে সুবর্ণচরের চর ওয়াপদা ইউনিয়নে মা ও মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে চরজব্বর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ওই মামলা করেন। মামলায় আবুল খায়েরসহ দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি একজনকে অজ্ঞাত হিসেবে দেখানো হয়।
চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার শিকার মা ও মেয়েকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য আজ দুপুরে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বিকেলে তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া নির্যাতনের শিকার মা ও মেয়েকে ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য আগামীকাল বুধবার আদালতে হাজির করা হবে।
নির্যাতনের শিকার নারীর মায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দিবাগত রাতে এক ব্যক্তি সিঁধ কেটে তাঁর মেয়ের ঘরে ঢোকেন। এরপর তিনি দরজা খুলে দিলে আরও দুজন প্রবেশ করেন। এরপর তাঁরা তাঁর মেয়ে ও নাতনির হাত-মুখ বেঁধে ফেলেন। তাঁদের মধ্যে দুজন তাঁর মেয়েকে (৩০) ধর্ষণ করেন, একজন নাতনিকে (১২) ধর্ষণ করেন। ঘটনার সময় তাঁর জামাতা বাড়িতে ছিলেন না। তিন-চার দিন ধরে তিনি কাজে বাড়ির বাইরে ছিলেন। তিনি জানান, যে তিনজন তাঁর মেয়ে ও নাতনিকে ধর্ষণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে আবুল খায়েরসহ দুজনকে তাঁর মেয়ে ও নাতনি চিনতে পেরেছেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের রাতে সুবর্ণচরে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আলোচিত ওই ঘটনার মামলার রায়ে গতকাল সোমবার ১০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক। এ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বার। আলোচিত মামলার রায়ের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই একই উপজেলায় আরেকটি দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেল।
জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাতে মা ও মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর দুজনকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে প্রধান আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি ওই ঘটনায় জড়িত নন। কেউ ষড়যন্ত্র করে ওই নারীকে তাঁর নাম বলার জন্য শিখিয়ে দিয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলেন। বরাবরই নারী নির্যাতনসহ এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।