সমুদ্রসৈকতজুড়ে সবুজ ঘাসের বিছানা। কিছুদূর পরপর কেওড়াগাছ। মনোমুগ্ধকর এই স্থানের নাম ‘গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত’
সমুদ্রসৈকতজুড়ে সবুজ ঘাসের বিছানা। কিছুদূর পরপর কেওড়াগাছ। মনোমুগ্ধকর এই স্থানের নাম ‘গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত’

পাহাড়-ঝরনার কাছেই অপূর্ব এক সমুদ্রসৈকত, যেতে চান?

সমুদ্রসৈকতজুড়ে সবুজ ঘাসের বিছানা। কিছুদূর পরপর কেওড়াগাছ। কেউ চাইলে বিকেলের মিষ্টি রোদে সবুজ ঘাসে বসে সাগরের পানিতে পা ভিজিয়ে চুপচাপ সময় কাটাতে পারেন দীর্ঘক্ষণ। লাল কাঁকড়ার দৌড়াদৌড়ি আর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে দেখতে হারিয়ে যেতে পারেন কল্পনার সাগরে। মনোমুগ্ধকর এই স্থানের নাম ‘গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত’।

অপূর্ব এই সমুদ্রসৈকতের অবস্থান চট্টগ্রাম নগরের পাশের সীতাকুণ্ড উপজেলায়। নানা তীর্থস্থান আর পাহাড়-ঝরনার কারণে এমনিতেই পর্যটকদের গন্তব্যের তালিকায় থাকে সীতাকুণ্ড। গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতের কারণে নতুন করে উপজেলাটিতে পর্যটক বাড়ছে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ভিড় করছেন গুলিয়াখালী সৈকতে।

সমুদ্রসৈকতটির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং সহস্রধারা ও সুপ্তধারা নামে দুটি ঝরনা। ফলে পর্যটকেরা চাইলে স্বল্প সময়ে একসঙ্গেই সাগর-পাহাড়-ঝরনা দেখার পরিকল্পনা করতে পারছেন।

চট্টগ্রাম নগর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ড পৌর সদর। যেকোনো বাসে চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড পৌর সদর বাসস্ট্যান্ডে নামা যায়। এরপর আন্ডারপাস সড়কের নিচে নামলেই গুলিয়াখালী সৈকতে যাওয়ার সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাওয়া যায়। একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে প্রথমে গুলিয়াখালী বেড়িবাঁধে যেতে হয়। এ পর্যন্ত যেতে অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া নেয় ৩০ টাকা। এ ছাড়া ১৫০ টাকায় রিজার্ভ করা যায় অটোরিকশা। বেড়িবাঁধে পৌঁছানোর পর পায়ে হেঁটে কিংবা নৌকায় করে মূল সৈকতে যাওয়া যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১৪ সালের পর থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল শিক্ষার্থী সৈকতটিতে বেড়াতে এসে কিছু ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন। এরপর গুলিয়াখালীর সৌন্দর্যের কথা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, বাড়তে থাকে পর্যটক।

অপূর্ব এই সমুদ্রসৈকতের অবস্থান চট্টগ্রাম নগরের পাশের সীতাকুণ্ড উপজেলায়

২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে সরকার। উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫৯ দশমিক ১০ একর জায়গার সৈকতটিকে পর্যটন স্পট হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ফলে সৈকতটি এখন পর্যটন স্পট হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃত। গুলিয়াখালী সৈকতে দর্শনার্থীদের জন্য শৌচাগার, দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। বেড়িবাঁধের পাশে রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও।

গুলিয়াখালীতে আসা পর্যটকদের নৌকায় ভ্রমণ করান মাঝি জসিম উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেড়িবাঁধ থেকে মূল সৈকতে নেওয়ার জন্য তাঁদের ১৫টি পর্যটনবান্ধব নৌকা রয়েছে। স্লুইসগেট এলাকা থেকে মূল সৈকতে যেতে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৩০ টাকা। তবে যাঁরা আরও দূরে গিয়ে সাগরে নৌকা ভ্রমণ করতে চান, তাঁদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা নেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গুলিয়াখালীতে এখন সন্ধ্যার আগমুহূর্তে হরিণও দেখা যায়। অনেক পর্যটক হরিণ দেখতে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এ পর্যটন এলাকা এখন আগের তুলনায় অনেক নিরাপদ। এ পর্যটনকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের জীবিকা হয়েছে। অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান, অনেকে নৌকা চালান আবার অনেকে সৈকত এলাকায় দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তায় স্থানীয় বাসিন্দারাও তৎপর রয়েছেন।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শুধু গুলিয়াখালী নয়, সীতাকুণ্ডের সব দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের জন্য নিরাপদ। তবু পর্যটকেরা কোথাও সমস্যার সম্মুখীন হলে সীতাকুণ্ড থানা-পুলিশ সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা দেয়।