উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারখ্যাত গাজীপুরের চন্দ্রায় আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টা থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ত্রিমোড় এলাকায় শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে লাঠিসোঁটা হাতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় মহাসড়কে চলাচলকারী কিছু যানবাহনে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উত্তরবঙ্গের যানবাহন সীমিত আকারে চলাচল করলেও আশপাশের রুটের যানবাহন চলাচল করছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় তা অনেক কম। যানবাহন না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ। অনেকে হেঁটে চলাচল করছে। কোটাবিরোধী স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে আশপাশ। তবে বেলা ২টা পর্যন্ত কোথাও কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের শুরু থেকেই কোটা সংস্কারের দাবিতে তাঁরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিলেন। পুলিশ হঠাৎ তাঁদের ওপর হামলা করেছে। তাঁরা ছাত্র হত্যার বিচার চান, তাঁরা কোটার সংস্কার চান। কোটার সংস্কার ও হত্যার বিচার না হলে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
অপর দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভবানীপুর, মাওনা পল্লী বিদ্যুৎ মোড় ও জৈনা বাজার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ভবানীপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কলেজসহ আশপাশের কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। মাওনার পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় মহাসড়কের দুই লেন বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
মাওনা চৌরাস্তায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শরিক হয়েছেন এক নারী অভিভাবকও। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছি। কারণ, মানুষ কত কষ্ট করে লেখাপড়া করে। ঋণ করে ব্যাংকের টাকা তুলে দিনমজুরি করে সন্তানকে পাস করায়। কিন্তু তারা কেউ চাকরি পায় না, চাকরি নাই। খালি কোটাধারীরা পায়।’
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, ‘আমাদের দাবি যৌক্তিক। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্বিচার গুলি চালানোর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কোটাপদ্ধতি বাতিলেরও দাবি জানাই। আমরা শত শত শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসছি। আমাদের আন্দোলন চলবে।’
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম নাসিম বলেন, শিক্ষার্থীরা মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তবে কোনো হামলা বা যানবাহনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। তাঁদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘আমাদের এক হাজার পুলিশ সদস্য বিভিন্ন জায়গায় ভাগ করে মোতায়েন করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মেট্রোপলিটন অংশে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহিংসতা হয়নি।’
জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর জেলায় দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল দিচ্ছে।