কুষ্টিয়ায় হানিফের আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন মেয়র আনোয়ারের ছেলে

পারভেজ আনোয়ার
ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আনোয়ার আলীর ছেলে পারভেজ আনোয়ার। সোমবার বেলা তিনটায় জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে তিনি মনোনয়নপত্র তোলেন।

মনোনয়নপত্র নিয়ে বের হয়ে পারভেজ আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন,‘যেহেতু জননেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা উৎসবমুখর পরিবেশে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন দেখতে চেয়েছেন, সে ক্ষেত্রে দলের মধ্যে কোনো প্রার্থী হলে কোনো সমস্যা নেই। তাই নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। আমার বাবা আনোয়ার আলী দীর্ঘ জীবনে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছেন। আর কুষ্টিয়াকে আরও উন্নত করতে জনগণের সত্যিকারের সেবা করার জন্য সংসদ নির্বাচনে আসলাম। ভোটের ফলাফল পর্যন্ত মাঠে থাকব।’

মনোনয়নপত্র কিনে খোলা মাইক্রোবাসে উঠে পারভেজ আনোয়ার শহর প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় তাঁর গাড়ির সামনে ও পেছনে শতাধিক মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন। তিনি হাত নেড়ে সড়কের পাশে মানুষকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন।

কুষ্টিয়া-৩ আসনে দুবারের সংসদ সদস্য হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি আবারও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, পারভেজ আনোয়ার ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতি করেছেন। বর্তমানে কোনো পদে নেই। তবে তাঁর বাবা আনোয়ার আলী আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা। একসময় জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এ ছাড়া ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র হিসেবে আছেন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন উন্মুক্ত করেছেন। তনুর কোনো পদপদবি নেই। তাঁর বাবা আমাদের প্রবীণ নেতা। তবে জননেতা মাহবুব উল আলম হানিফ কুষ্টিয়ার অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। তাঁর নৌকার বাইরে কেউ ভোট দেবে না। জনগণ তাঁকেই আবার সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চায়।’

রোববার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী। তিনি দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী প্রয়াত আফাজ উদ্দীন আহমেদকে প্রায় ১৫ হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন। এবারও নৌকার বিরুদ্ধে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

রেজাউলের ছেলে ইমরান চৌধুরী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তৃণমূলে আমার আব্বার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা আছে। একবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। আর যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হন। তাই নির্বাচন করবেন। ইতিমধ্যে নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। মাঠে নেমেও পড়েছি।’

এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য হলেন আ ক ম সরওয়ার জাহান। তিনি দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। রেজাউল হকের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সরওয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র যদি কেউ না মানে, সেখানে আমার বলার কিছু নাই। দলই সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচন করতে চাই ভালো কথা, আসুক নির্বাচনে। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মোকাবিলা করব। আর নৌকার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

দলীয় সূত্র বলছে, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় উপজেলা দৌলতপুর। এই উপজেলায় নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। তাই মনোনয়নও চেয়েছিলেন বেশি সংখ্যক। সর্বোচ্চ সংখ্যক মনোনয়ন চাওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলেছে নানা আলোচনা।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুর রউফ। সোমবার বিকেলে এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডলের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র নেন। ইউএনও মুঠোফোনে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। আবদুর রউফ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে দশম জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে ২০১৪ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নৌকার এমপি হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করে জনগণের ভালোবাসা পেয়েছি। সে জন্য এবারও দলীয় মনোয়ন প্রত্যাশা করেছিলাম। তবে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সে জন্য জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করব। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে আমি জয়লাভ করব।’

কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান অরুণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (রউফ) সব সময় এমন করে থাকেন। আমার পরিবারের বিরুদ্ধে তিনি আগেও এমন কাজ করেছেন। তার এই কাজে আমরা বিচলিত নই। ভোটের মাঠে মোকাবিলা করা হবে।’