ভারতকে কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না ইঙ্গিত করে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা সীমান্তে কোনো ধরনের ছাড় দেব না। গত ১৫ বছরে কিন্তু তারা (ভারত) বহু সুবিধা নিয়েছে। এরা এত সুবিধা নিয়েছে যে এখন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না দেখেই তারা বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। তাদের এই সুবিধা আর দেওয়া হবে না।’ আজ সোমবার খুলনায় এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে সুধীজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যারা লুট করে নিয়ে গেছে, তারা ওপারে গিয়ে খুব আরাম আয়েশে আছে। সেখান থেকে বিভিন্ন ইনস্ট্রাকশন পাস করছে আর এ দেশে তাদের সমর্থকেরা খুব লাফাচ্ছে। এদের লাফানো আর বেশি দিন বরদাস্ত করা হবে না। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদেরও বুঝতে হবে যেন তারা বেশি বাড়াবাড়ি না করে।’
সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে অনেক কিছু প্রচার করে। আপনারাই পারেন সত্য ঘটনা প্রকাশ করে প্রতিবাদ করতে। সত্য ঘটনা প্রকাশ করে ওদের মুখে চুনকালি দিতে পারবেন। যেখানে যা ঘটেছে সত্যিটা প্রকাশ করেন, এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’ সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক না করার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সিভিল ড্রেসে কাউকে অ্যারেস্ট করা চলবে না। সিভিল ড্রেসে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে আগে নিজের আইডি প্রদর্শন করতে হবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
খুলনায় যানজট নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের কাজে লাগানো হবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ট্রাফিক কন্ট্রোল করা বেশ কষ্টদায়ক। বিশেষ করে যারা বুড়ো বয়সে দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের জন্য সেটা আরও বেশি কঠিন। তাঁরা রাস্তায় আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন; কিন্তু তাঁদের জন্য কোনো বাথরুম, টয়লেট নেই। তাঁদের খাওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই। এগুলো সাধারণত পাবলিক বুঝতে চায় না। এ জন্য আমরা বাইরে থেকে লোক নিতে চাইছি। কমিউনিটি পুলিশ দিয়েই যদি ট্রাফিক কন্ট্রোল সফল হয়, তাহলে খুলনাতেও ওই ব্যবস্থা চালু করা হবে।’
খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে সুধীজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘খুলনায় চাঁদাবাজের সংখ্যা বেড়ে গেছে, এটা কমিয়ে আনতে হবে। আপনারা যদি সক্রিয় হন, তাহলে চাঁদাবাজি কমে আসবে। চাঁদাবাজরা লোকজনের জীবন অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে। এদের কারণে জিনিসপত্রের দামও বেড়ে যাচ্ছে। এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আপনারা যদি সচেষ্ট না হন, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যার এলাকায় বেশি চাঁদাবাজি হবে, তাঁকে অন্য জায়গায় পাঠানো হবে। দরকার হলে তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘এখন অনেক কর্মকর্তা ভবিষ্যতে যিনি ক্ষমতায় আসবেন, তাঁকে তেল দেওয়া শুরু করেছেন। আমি বলব, আপনারা যাঁদের তেল দেওয়া শুরু করেছেন, যে সময় তাঁরা পাওয়ারে আসবে, তখন দেখবেন আপনাদের তেল শেষ হয়ে গেছে। তিনি আরেকজনের তেল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাই আপনাদের তেল আপনারা রিজার্ভ করে রাখুন। এখন আমাদেরও তেল দেওয়ার দরকার নেই, অন্য কারোরই তেল দেওয়ার দরকার নেই। আপনারা তেল না দিলে জিনিসপত্রের দাম কমবে।’
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা খুলনার মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেন। ঘুষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ঘুষ বিষয়টি যদি উঠে যেত, তাহলে দেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। ঘুষ আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যাধি। প্রতিটি জায়গায়, পদক্ষেপে ঘুষ। আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। হারাম খাওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ হয়েছে, ওদিকে হারামের পয়সা পকেটে নিয়ে কোনো লাভ হবে না। ঘুষ–বাণিজ্য থেকে সরে আসতে হবে। আমার ক্ষেত্রেও যদি ঘুষের খবর পান, তাহলে মিডিয়াতে তুলে দেবেন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমি সবার আন্তরিক সহযোগিতা চাই। আপনাদের সহযোগিতার বলে বলিয়ান হয়ে এ দেশে, সমাজে একটি স্থিতাবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আশা করি, আমার এই পথচলায় আপনারা সহযোগী হবেন।’