উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আরেক রোহিঙ্গা যুবককে হত্যা

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির
ফাইল ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আরও একজন রোহিঙ্গা যুবককে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে উপজেলার তাজনিমারঘোনা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৯) সি-৬ ব্লকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। সন্ত্রাসীরা তাঁকে প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়, এরপর গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। নিহত এই রোহিঙ্গা যুবকের নাম মো. হুজিত উল্লাহ (৩৫)। তিনি ওই ব্লকের রোহিঙ্গা ফয়েজুল করিমের ছেলে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উখিয়ার হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-২০) গলা কেটে হত্যা করা হয় রোহিঙ্গা নেতা করিম উল্লাহকে (৩২)। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের এম-২৭ ব্লকের রোহিঙ্গা গণি মিয়ার ছেলে। করিম উল্লাহ ওই ব্লকের সাব মাঝি (নেতা) ছিলেন। দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) দায়ী করা হচ্ছে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই রোহিঙ্গা যুবককে হত্যার ঘটনায় আশ্রয়শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, নিহত এই দুই রোহিঙ্গা যুবক আরসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কয়েক মাস আগে তাঁরা আরসা ত্যাগ করে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনে (আরএসও) যোগ দেন। এ কারণে তাঁদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত হুজিত উল্লাহর পরিবারের বরাতে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন বলেন, আজ বিকেলে ক্যাম্প-১৯-এর সি-৬ ব্লকের একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন হুজিত উল্লাহ। এ সময় অস্ত্রধারী ও মুখোশ পরা ৭-৮ জন সন্ত্রাসী হুজিতকে তুলে নিয়ে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর ওই সন্ত্রাসীরা হুজিতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকেন। পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

ঘটনাস্থলে হুজিতের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চলছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আরসা সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবিরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যার পর দুর্গম পাহাড়ের আশ্রয়শিবিরে ঢুকে চাঁদাবাজি, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও মাদক চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছে। আরসা ছেড়ে যাঁরা আরএসও অথবা নবী হোসেন গ্রুপে যোগ দিচ্ছেন, সেই রোহিঙ্গাদের তুলে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। চলতি মাসে আরসার সন্ত্রাসীরা তিনজন রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করেছে। এতে আশ্রয়শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরুর পরের কয়েক মাসে। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।