জন্মদিনে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ

ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজনে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে তাঁর ৭৬তম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ করেছেন স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা। প্রতিবারের‌ মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদের পরিবার, তাঁর ভক্ত, কবি–লেখক ও নাট্যজনেরা ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন নুহাশপল্লীর লিচুতলায়। নন্দিত লেখকের প্রিয় চরিত্র হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু এবং নীল শাড়িতে‌ রূপা সেজে আসেন ভক্ত ও পাঠকেরা। তাঁরা লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা জানান।

আজ বুধবার সকালে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই পুত্র নিনিত হুমায়ূন ও নিষাদ হুমায়ূন কবর জিয়ারত করেন। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। লেখকের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর কাটা হয় কেক।

এ সময় হুমায়ূন আহমেদের লেখালেখি ও স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেন তাঁর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের সবকিছু সযত্নে রয়েছে। আমরা এখনো জাদুঘরটা শুরু করতে পারিনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আর্থিক সমস্যা। নুহাশ পল্লী থেকে যে আয় হয়, সেই আয় দিয়ে নুহাশ পল্লী পরিচালনা করা হয়, পাশাপাশি তাঁর স্কুলের কাজেও ব্যবহৃত হয়। আমরা আশা করছি, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই জাদুঘরের কাজ শুরু করব এবং শেষ করব।’ হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিশেষ কোনো দিনে আলাদা কোনো ভাবনা হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ দিন ছাড়া সাধারণ দিনগুলোতেই তাঁকে বেশি অনুভব করি।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে তাঁর নানার বাড়িতে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। তাঁর বাবা ফয়েজুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান।

এদিকে শোভাযাত্রা, কেক কাটা, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নেত্রকোনায় হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদ্‌যাপিত হয়েছে। ‘হিমু পাঠক আড্ডা’ নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে আজ বেলা ১১টার দিকে শহরের সাতপাই নদীর পাড় এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়কগুলো ঘুরে মোক্তারপাড়া মাঠে মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।

পরে সেখানে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলপনা বেগমের পরিচালনায় লেখকের জীবন ও কর্ম নিয়ে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস, জেলা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ, পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সাহেব আলী পাঠান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার, প্রাবন্ধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবি সরোজ মোস্তফা, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সভাপতি ছড়াকার শ্যামলেন্দু পাল, চন্দ্রনাথ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হাসান, জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব ম. কিবরিয়া চৌধুরী, কবি তানভীর জাহান চৌধুরী, কবি মৃণাল কান্তি চক্রবর্তী প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ নেত্রকোনার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন। এমন কৃতী সন্তানকে জন্ম দিয়ে নেত্রকোনার মাটি ধন্য। তিনি তাঁর উপন্যাসে একটি চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন হিমু। প্রত্যেকের জীবন যেন হিমুর মতোই আনন্দময় হয়, এই প্রত্যাশা করছি তাঁর জন্মদিনে।’

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদ্‌যাপন উপলক্ষে নেত্রকোনায় শোভাযাত্রা বের করে ‘হিমু পাঠক আড্ডা’ নামের একটি সংগঠন। বুধবার বেলা ১১টার দিকে নেত্রকোনা শহরের সাতপাই নদীর পাড় এলাকায়

হুমায়ূন আহমেদকে স্বাধীনতাত্তোর বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ  বলেন, তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হওয়ার পরেই খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছেছিলেন। মানুষ যখন বইবিমুখ হয়ে পড়েন, তখন তিনি জাদুকরের মতো গল্প, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি লেখে পাঠক তৈরি করেছেন। তাঁর লেখা আজও তরুণ সমাজের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি প্রয়াত হলেও যুগ যুগ ধরে বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

এর আগে সকালে ১০টায় কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে লেখকের নিজ হাতে গড়া শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আনন্দ শোভাযাত্রা, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সহকারী প্রধান শিক্ষক শরীফ আনিস আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কেন্দুয়ার ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার, স্কুলশিক্ষক তুহিন সরকার, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিয়া ইসলাম, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফরজানা আক্তার প্রমুখ।

ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, হুমায়ূন আহমেদ অবহেলিত এই এলাকার মানুষকে আলোর পথ দেখাতে নিজ হাতে বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয়টিকে নিয়ে অনেক বড় করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এসএসসিতে অংশ নেওয়া প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীই ভালো ফল অর্জন করছে।