বন্ধ ঘরে মায়ের লাশের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুটি ফিরে গেল নানির কোলে

শিশু
প্রতীকী ছবি

সিলেটে বন্ধ ঘরে মায়ের লাশের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া দেড় বছরের শিশুকে তার নানির কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ওই মেয়েশিশুকে নানির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে নগরের পাঁচতলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটের তালাবদ্ধ ঘর থেকে এক নারীর (৩১) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় লাশের পাশে ওই নারীর দেড় বছরের মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটি ‘ট্রমার’ মধ্যে রয়েছে। কোনো শব্দ করছে না। তবে পাশে কেউ কাঁদলে শিশুটিও কেঁদে উঠছে। এখন শিশুটির ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন।

নিহত নারী এক ওমানপ্রবাসীর স্ত্রী বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁর বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নিহত নারীর স্বামী ওমানপ্রবাসী বলে প্রতিবেশী ও স্বজনদের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাঁর নাম জানা গেলেও পুরো ঠিকানা জানা যায়নি। তবে ওই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে প্রবাসী কি না, সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ওই ব্যক্তি বর্তমানে দেশে রয়েছেন বলেও জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে ওই নারী পাঁচতলা ওই ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। গতকাল ওই বাসা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে থাকেন ভবনের বাসিন্দারা। পরে ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখে ভেতর থেকে দুর্গন্ধ ছাড়ানোর বিষয়টি তাঁরা বুঝতে পারেন। দুর্গন্ধ বাড়তে থাকলে গতকাল রাতে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে পুলিশ ওই নারীর লাশ খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। পাশেই অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল তাঁর মেয়েটি। পরে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আজ বিকেলে ওই নারীর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিহত নারীর বাবা অভিযোগ বলেন, তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর জামাতা দাম্পত্য কলহের জেরে হত্যা করেছেন। তাঁর জামাতা ভরণপোষণ দিতেন না। এ জন্য তাঁর মেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করেছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফেরার পর জামাতা ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। ওই মামলায় সপ্তাখানেক আগে জামাতা জামিনে বের হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। তবে জামাতা এখন কোথায় আছেন, সেটা তিনি জানেন না।

তবে পুলিশ বলছে, নিহত নারীর বিয়ের প্রকৃত কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। নিহত নারীর পরিবার অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম বলতে পারলেও ঠিকানা বলতে পারছেন না। এরপরও পুলিশ তদন্তে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই মাসে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্রও জমা হয়েছে।

নিহত নারী সুরতহাল ও ময়নাতদন্তে অংশ নেওয়া চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, তিন দিন আগে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত নারীর শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে এটা হত্যাকাণ্ড হিসেবে ধরে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাটি রহস্যজনক। ওই ঘরে উৎকট দুর্গন্ধে শিশুটি কীভাবে টিকে ছিল, সেটিও ‘অলৌকিক ঘটনা’। লাশ পচে যাওয়ায় দুর্গন্ধে অনেকেই ঘরের ভেতরে যেতে পারেননি। বাচ্চাটি ছোট হওয়ায় কাউকে ডাকাডাকি করতে পারেনি। খাবার গ্রহণ না করায় একপর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।

আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো প্রাথমিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না। আশা করছি, দ্রুত বিষয়টি খোলাসা হবে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আইনের আওতায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় নিহত নারীর মা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’