সিলেটে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হট্টগোল ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে নগরের কিনব্রিজের চাঁদনীঘাট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হট্টগোলের পাশাপাশি চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ সময় শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।
শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনের সংসদ সদস্য। সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় জেলা আওয়ামী লীগ। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কিনব্রিজ এলাকায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আলোচনা সভা সংক্ষিপ্ত করতে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যের পরই বিকেল পাঁচটার দিকে প্রধান অতিথিকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়। তখন মঞ্চে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব ও সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-মধ্যনগর) আসনের সংসদ সদস্য রণজিত চন্দ্র সরকার উপস্থিত ছিলেন। মেয়র ও দুই সংসদ সদস্যকে কেন বক্তব্য দিতে দেওয়া হলো না, এ নিয়ে ছাত্রলীগের বড় একটা অংশ হট্টগোল শুরু করে। পরে প্রধান অতিথি বক্তব্যের পর অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে গাড়িতে ওঠামাত্রই ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ অংশটি অন্তত শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করেন। পরে অনুষ্ঠানস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ভেতরে-ভেতরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একটি অংশের নেতৃত্বে আছেন মঞ্চে থাকা মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও দুই সংসদ সদস্য। অন্য অংশের সঙ্গে আছেন প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তাই মেয়র ও সংসদ সদস্যদের বক্তব্য দিতে না ডাকায় ছাত্রলীগের একটা অংশ ক্ষুব্ধ হয়। পরে প্রধান অতিথি বক্তব্য শেষে মঞ্চ থেকে নামার পরই ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধরা হট্টগোলের পাশাপাশি চেয়ার ভাঙচুর করেন।
সংসদ সদস্য রণজিত সরকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত নয়। এটা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান। ছাত্রলীগ গিয়ে কেন ঝামেলা করবে? কে বা কারা চেয়ার ছোড়াছুড়ি করেছে, আমরা জানি না।’
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন খান বলেন, বড় অনুষ্ঠান হলে টুকটাক বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে। ছোট একটা ঘটনা ঘটেছে। হট্টগোল বা চেয়ার ভাঙচুরের বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় যাওয়ার তাড়া থাকায় প্রধান অতিথি আবদুর রহমানকে আগেই বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর মেয়র, সংসদ সদস্যসহ আমন্ত্রিত অন্য অতিথিদের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধান অতিথি মঞ্চে থাকাকালে কেন মেয়র ও দুজন সংসদ সদস্যকে বক্তব্য দিতে ডাকা হয়নি, এ জন্য তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা ক্ষিপ্ত হন। প্রধান অতিথি বক্তব্য শেষে চলে যাওয়ার সময় মেয়র ও দুজন সংসদ সদস্যও অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এরপরই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অদম্য। তিনি বিশ্বের মোড়লদের চোখরাঙানি ভয় পান না। বহু রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলার মানুষকে নির্বাচন উপহার দিয়েছেন। তাই আমাদের সবাইকে শেখ হাসিনার উন্নয়নের পক্ষে কাজ করতে হবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।