৭৬ বছরের ময়না বেগম ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন উপজেলার পদ্মার চরের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী চান্দু ব্যাপারী মারা গেছেন তিন বছর আগে। ছেলে কৃষিকাজ করে সংসার চালান। টানাটানির সংসারে তিন বেলা খাবার জোটা দায়। সেখানে শীতের গরম কাপড় কিনবেন কীভাবে! তবে ময়না বেগমকে শীতে আর কষ্ট পেতে হবে না। আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে তাঁর হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়।
কম্বল পেয়ে ময়না বেগম বলেন, ‘আমার কম্বল আছিল না, ছেঁড়া কাঁথা-কুঁথা দিয়ে কোনো রকম কালাইয়া রাইত কাটাইছি। এহন কম্বল পাইলাম। রাইতে কম্বল মুড়ি দিয়া ঘুমাইতে পারব। কাল (শীত) আর ধরবার পারব না। কম্বল মুড়ি দিয়া গরমের মধ্যে ঘুমাইতে পারব। এইবার যে কাল পড়ছে, বাঁইচা থাকব বইলা ভাবি নাই। কেউ আমাগো খোঁজ নেয় নাই। আপনাদের দোয়ায় আইজ কম্বল পাইলাম।’
শুধু ময়না নন, আজ চর ভদ্রাসন উপজেলার চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের লস্কর ডাঙ্গী, মুন্সির ডাঙ্গী, আলমগীরের গ্রাম, চর গোপালপুর ও সিকদার ডাঙ্গী গ্রামের দুই শতাধিক শীতার্ত নারী-পুরুষের হাতে কম্বল তুলে দেয় প্রথম আলো বন্ধুসভা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চর কল্যাণপুর বালুর ঘাট এলাকায় এ আয়োজন করা হয়।
সকাল আটটায় ফরিদপুরের চকবাজার এলাকা থেকে কম্বল কিনে দুটি ইজিবাইকে বন্ধুসভার সদস্যরা ২৭ কিলোমিটার দূরে চর ভদ্রাসন উপজেলার কাজিবাড়ি ঘাটে যান। পরে সেখান থেকে ট্রলারে পদ্মা নদী পাড় হয়ে পৌঁছান চর কল্যাণপুর বালুর ঘাট এলাকায়। এর আগে গতকাল সোমবার বন্ধুসভার সদস্যরা পদ্মা নদী পাড় হয়ে চর এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কম্বল নেওয়ার কুপন দিয়ে আসেন।
কম্বল হাতে পেয়ে খুশি লস্করকান্দি গ্রামের বৃদ্ধা লাইলী বেগম (৬২)। তিনি বলেন, ‘কাঁথা দিয়া শীত কাটাছি। কালাইয়া উঠছি। ঠিকমতো ঘুমাইতে পারি নাই। আমার ছোয়াল বিয়া কইরা শ্বশুরবাড়ি থাকে, আমার কোনো খোঁজ নেয় না। তোমার আমার ছোয়ালের কাজ করলা। ঘরবাড়ি নাই। থাকি অন্যের বাড়িতে। এ কম্বল আল্লার দান। অহন শান্তিতে ঘুমাইতে পারব।’
কম্বল পেয়ে লস্করকান্দি গ্রামের কৃষক ওসমান মুন্সি (৫৬) বলেন, কয়েক দিন তো শীতের নামে বরফ পড়েছে। ঘাট থেকে বাড়িতে যেতে শীতে জমে যেতেন। এবার কম্বল মুড়ি দিয়া শান্তিতে চলাচল করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চর ঝাউকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. বদরুজ্জামান মৃধা, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফারুক বিশ্বাস, ১, ২ ও ৩ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য লাইলী আক্তার ও ওই ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী সদস্য সাজেদা বেগম। আর ফরিদপুর বন্ধুসভার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি মানিক কুণ্ডু, সাংগঠনিক সম্পাদক সজীব দত্ত, অর্থ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র মণ্ডল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবদুস সবুর মোল্লা, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সুমিত বসু, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক বাঁধন পাল, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুব্রত পাল।
ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধা বলেন, ‘আমরা চরের মানুষ। আমাদের দিকে সবার নজর কম। আপনারা কষ্ট কইরা রাস্তা ও নদী পাড় হইয়া চরে আসছেন, এর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা আমার কাজ একটু সহজ কইরা দিলেন।’
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।