শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বরিশালে গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা

বরিশালে বেসরকারি গ্লােবাল ইউনিভার্সিটি হঠাৎ করে তিনদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের নথুল্লাবাদ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

তিন দিনের জন্য (১৬ থেকে ১৮ আগস্ট) সব কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে বরিশালের বেসরকারি গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (জিইউবি)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘোষণা দেওয়ার পরপরই শিক্ষক–শিক্ষার্থীকে ভবনের ভেতরে রেখে তালা দিয়ে প্রশাসনের লোকজন চলে যান। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা এসে তাঁদের উদ্ধার করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হঠাৎ এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিকানার কিছু অংশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের তাঁর স্ত্রী সৈয়দা আরজুমান বানু নার্গিস এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি চেয়ারম্যান, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক সদস্য। এ সংক্রান্ত কোনো ঝামেলার কারণে হয়তো এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝামেলা হতে পারে—এমন আশঙ্কায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ক্যাম্পাসের সব কার্যক্রম স্থগিতের নোটিশ দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টি নগরের নথুল্লাবাদ শের-ই-বাংলা সড়কে অবস্থিত। এটি ২০১৫ সালে চালু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ছয়টি বিভাগে সাড়ে ৬৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক আছেন ৩২ জন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ও নোটিশ বোর্ডে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এ কে এম এনায়েত হোসেনের স্বাক্ষর করা একটি দাপ্তরিক আদেশ ক্যাম্পাসে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত ১৬ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসেন। তবে ক্যাম্পাস তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।

পরে জানা যায় তালাবদ্ধ ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েছেন। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে তাঁদের বের করে আনেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যকে ফোন করেন শিক্ষার্থীরা; কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে কর্তৃপক্ষের কাউকে না পেয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এরপর তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ করেন।

শিক্ষার্থী মিতু আক্তার বলেন, ‘কাউকে কিছু না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভেতরে রেখে তালা মেরে চলে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আমরা এসে বাকিদের উদ্ধার করি। এখন আমরা জানতে চাই, কেন এমনটা হলো?’

ভেতরে আটকা পড়া অন্তত দুজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েই পিয়ন দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের হয়রানি করা হয়। পরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভেতরে রেখে তালা মেরে চলে যান প্রশাসনের লোকজন।

বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস–পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম চালু করা এবং ক্লাসরুম আধুনিকায়ন করাসহ আট দফা দাবি উপস্থাপন করেন। আর এ দাবিগুলো অবিলম্বে মানা না হলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার পতনের পর শোনা যাচ্ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। আর যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এতগুলো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কী হবে? এটা বুঝতে পেরেই আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। যদি প্রশাসনে কারও থাকা নিয়ে সমস্যা হয়, তবে তিনি পদত্যাগ করে নতুনদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার উদ্যোগ নিক। তার পরও শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ হোক।’

শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবির মধ্যে আরও রয়েছে সহকারী রেজিস্ট্রার নেওয়ামুল হকের পদত্যাগ, বিশ্ববিদ্যালয় চলাকালীন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিকভাবে বন্দী করে রাখার সুষ্ঠু জবাব দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব ছয় মাস পরপর সবার সামনে প্রকাশ করা,  সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা, সেমিস্টার ফি ও ওয়েভারসহ সব বৈষম্যের অবসান করা, আইন বিভাগে যোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার রুমে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এ কে এম এনায়েত হোসেন বলেন, ইউজিসি থেকে এখনো ক্লাস চালুর নির্দেশ তাঁদের দেওয়া হয়নি, দিলেই শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে। তবে গতকাল শুধু আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘ল সোসাইটি’ নামে একটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রোগ্রামের আয়োজন নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। তখন তাঁরা জানতে পারেন, ওখানে দুটি পক্ষ রয়েছে। এ জন্য  ঝামেলা হতে পারে। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ক্যাম্পাসের সব কার্যক্রম স্থগিতের নোটিশ দেওয়া হয়।

এনায়েত হোসেন আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা মৌখিকভাবে তাঁকে বলেছেন দাবির বিষয়ে। তিনি তা লিখিত আকারে চেয়েছেন। কয়েকটি দাবি শিগগিরই সমাধান করা যাবে। বাকিগুলোতে সময় লাগবে। তবে শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখা হবে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরও আশ্বস্ত করা হয়েছে।