বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমকে ‘রাজাকারপুত্র’ আখ্যা দিয়ে আগামী নির্বাচনে তাঁকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দেওয়ার দাবিতে গতকাল শনিবার বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এক দিন পর আজ রোববার সংসদ সদস্যের পক্ষে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি পক্ষ। তাঁরা গতকালের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্যকে ‘ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে শাহে আলমকে আবার মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।
রোববার বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হারুন অর রশিদ, জগন্নাথ দে, আবদুর রাজ্জাকসহ বানারীপাড়া ও উজিরপুরের অর্ধশত বীর মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সারা দেশের মতো বানারীপাড়ায় যখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন নেমে আসে, তখন তরুণ ছাত্রনেতা শাহে আলমের নেতৃত্বে তাঁরা (মুক্তিযোদ্ধা) অন্যায়ের প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিলেন। শাহে আলম নিজের যোগ্যতায় দেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে ভিপি পদে নির্বাচন করেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য ভূমিকা রাখায় শাহে আলম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। এরপর তিনি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের লুটপাটের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। এ জন্য শাহে আলমের বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি চক্র ষড়যন্ত্র শুরু করে। ওই স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর বিরুদ্ধে নেমেছেন বলেও দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ষড়যন্ত্র করে সংসদ সদস্য শাহে আলমকে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হলে আওয়ামী লীগের পরাজয় হবে। সংসদ সদস্য শাহে আলমের বাবা ও তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে যে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, তা বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছেন। তাঁরা বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বরিশাল-২ আসনে শাহে আলম আওয়ামী লীগের উপযুক্ত প্রার্থী। এক প্রশ্নের জবাবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, সরকারের যুদ্ধাপরাধীর তালিকা ভুলও হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংসদ সদস্যের বাবা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।
এর আগে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের দাবি নৌকা প্রতীকে আর নয় যুদ্ধাপরাধী পরিবারের প্রার্থী’ শিরোনামে গতকাল বরিশাল প্রেসক্লাবে বানারীপাড়া–উজিরপুরের ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্য শাহে আলম তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাঁকে বরিশাল-২ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাঁদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে তাঁকে মনোনয়ন না দেওয়া হোক।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, সংসদ সদস্যের বাবা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শাহে আলম সংসদ সদস্য হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিবারের পথ অনুসরণ করেছেন। জনগণের কথা না ভেবে নিজেই বিত্তবৈভবের পাহাড় গড়েছেন। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা কুমুদ বিহারী গুহঠাকুরতার সমাধি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার বাসভবন ভেঙেছেন। স্কুলের নামে জমি দখল করেছেন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম বলেন, একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্বাচন সামনে রেখে তাঁর বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ করছে।