নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ফুটবল টুর্নামেন্টের ব্যানারে নাম না থাকাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও বাড়িঘর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।
রোববার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের শ্রীনিবাসদী এলাকায় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাসুম শিকারি ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আমির হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষ টেঁটা, রামদাসহ দেশি অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
এদিকে মাসুমসহ তাঁর অন্তত চারজন সমর্থকের বাড়িঘর লুটপাট চালিয়েছে প্রতিপক্ষ। স্থানীয় রাজনীতিতে মাসুম ও আমির হোসেন উভয়েই বিএনপির ঢাকা বিভাগীর সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের অনুসারী।
আহত ব্যক্তিরা হলেন আমির হোসেনের ভাতিজা সাব্বির হোসেন, হাবিবুর রহমান, কাউসার আহমেদ, মো. জামাল এবং মাসুমের অনুসারী বিএনপি নেতা মো. দেলোয়ার, মো. মাসুদ, রুবেল শিকারি ও মো. সামাদ। তাঁদের মধ্যে সাব্বির, দেলোয়ার ও মাসুদকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও উভয় পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে শ্রীনিবাসদী ফ্রেন্ডস ক্লাবের উদ্যোগে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ছিল। মাসুমের ভাই মামুন শিকারি ও আমির হোসেনের ভাতিজা রুহুল আমিন আয়োজক কমিটির সদস্য। খেলা উপলক্ষে রোববার সকাল থেকে মাঠের এক পাশে অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয় নজরুল ইসলাম আজাদকে। অনুষ্ঠানের ব্যানারে আমির হোসেনের নাম ছিল না। এ নিয়ে রুহুল আমিনসহ আমির হোসেনের বাড়ির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা খেলার মঞ্চ ভাঙচুর করেন। এ সময় উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জেরে উভয় পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান।
নিজেকে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি উল্লেখ করে আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলার আয়োজক পাঁচজন। কিন্তু বাকিদের সঙ্গে আলাপ না করেই মাসুম শিকারির ভাই এককভাবেই অনুষ্ঠান আয়োজন করে ফেলে। সেখানে তারা নজরুল ইসলাম আজাদকে অতিথি করে। এ নিয়ে তর্কের জেরে মাসুম শিকারির নেতৃত্বে বিকেলে দেড় থেকে দুই শতাধিক লোক অস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িঘরে হামলা চালায়। আমার লোকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে।’ এ ঘটনায় থানায় মামলা করবেন বলে জানান আমির।
তবে মাসুম শিকারির অভিযোগ, ‘আমির বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি মূলত ব্যবসায়ী। ৫ আগস্টের পর নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রভাব তৈরির চেষ্টা করছেন। ফলে খেলার ব্যানারে স্বাভাবিকভাবেই আমিরের নাম যায়নি। এ নিয়ে তাঁর ভাতিজা রুহুল আমিনসহ লোকজন মঞ্চ ভাঙচুর করেন। আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে তাঁরা প্রথমে আমাদের লোকজনের ওপর অস্ত্রসহ হামলা করেন। পরে আহত ব্যক্তিদের নিয়ে হাসপাতালে চলে এলে অন্তত পাঁচটি বাড়িতে লুটপাট চালান তাঁরা।’ এ ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করবেন।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন বলেন, ‘ফুটবল খেলা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়েছে। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিসহ তাঁর অনুসারীদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’