তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নিজের ছেলে ও ভাইকে দলীয় প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছেন বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান। যদিও এবারের উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্তভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে দুই উপজেলার অন্তত ১২ জন নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে সংসদ সদস্য নিজের ছেলে ও ভাইকে প্রার্থী মনোনীত করায় ক্ষুব্ধ হয়েছে নেতা-কর্মীদের একাংশ।
দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদে এবার নির্বাচন হবে চার ধাপে। প্রথম ধাপে ৮ মে সারিয়াকান্দি, সোনাতলাসহ ১৫২টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে বগুড়া-১ আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান। ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তাঁর স্ত্রী সাহাদারা মান্নান দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর সারিয়াকান্দিতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে দলের বেশ কয়েকজন নেতা মাঠে নামেন। তাঁদের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আইয়ুব আলী তরফদার, সাধারণ সম্পাদক আশিক আহম্মেদ, সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান আনসার আলী মাস্টার ও কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান অন্যতম। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ, পোস্টার ও ব্যানার টানিয়ে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে সংসদ সদস্যের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন ওরফে সজলকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, ১৪ মার্চ সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন সংসদ সদস্য। বৈঠকে বেশ কয়েকজন নেতা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেখানে সংসদ সদস্যের অনুসারী এক নেতা তাঁর ছেলে সাখাওয়াত হোসেনকে দলীয় প্রার্থী করার নাম প্রস্তাব করেন। তখন বৈঠকে উপস্থিত বেশির ভাগ নেতা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। পরে সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
সূত্র জানায়, দুদিন পর ১৬ মার্চ আস্থাভাজন নেতা-কর্মীদের নিজের বাসায় ডাকেন সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান। সেখানে তিনি সাখাওয়াত হোসেনকে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ঘোষণা দেন। এরপর অনুসারীদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে নামেন সাখাওয়াত হোসেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে সাহাদারা মান্নান নিজেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। দল তাঁকে (রেজাউল) মনোনয়ন দিলে সাহাদারা মান্নান নৌকা ডোবাতে মাঠে নেমেছিলেন। তখন বিষয়টি কেন্দ্র পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এবার দলীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণার সুযোগ নেই। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তিনি নিজের ছেলেকে প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছেন। ছেলের পক্ষে নেতা-কর্মীদের কাজ করতে বলেছেন। এতে নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভেতরে-ভেতরে ক্ষুব্ধ।
সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান বলেন, সংসদ সদস্য কোনো বৈঠক ডাকেননি। সংসদ নির্বাচনে দলের একটি অংশ নৌকার বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। ওই অংশটি উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের মতো করে প্রার্থী দিতে চাইছে। কৌশলগত কারণে সংসদ সদস্যের বাসায় তাঁরা একত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে সাখাওয়াত হোসেনকে প্রার্থী করার পক্ষে তাঁরা মতামত দেন। সংসদ সদস্য তাতে সম্মতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে ২০১৯ সালে সোনাতলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের বেশ কয়েকজন নেতা প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন সাহাদারা মান্নান তাঁর ভাই মিনহাদুজ্জামান ওরফে লিটনকে প্রার্থী করার ঘোষণা দেন। পরে মিনহাদুজ্জামান উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে সাহাদারা মান্নান সংসদ সদস্য হলে মিনহাদুজ্জামানকে সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করেন।
এবারের নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে নিজের ভাইকে প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সেখানে মিনহাদুজ্জামান ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাহাদারা মান্নান সভাপতি-সহসভাপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে ভাইদের বসিয়ে সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বানিয়েছেন। এবারও মিনহাদুজ্জামানকে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দলীয়ভাবে সমর্থন দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও তাঁর পক্ষে কাজ করতে নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন তিনি।
এসব বিষয়ে কথা বলতে সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ধরেননি। ছেলে ও ভাইকে প্রার্থী করার বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সারিয়াকান্দিতে নেতা-কর্মীদের সমর্থন ও অনুরোধে তিনি ছেলেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে সোনাতলায় মিনহাদুজ্জামান আগে থেকেই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আছেন। জনপ্রিয়তার কারণে তিনি এবারও প্রার্থী হতে চেয়েছেন। তাঁর পক্ষে কাজ করতে নেতা-কর্মীদের চাপ দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।