কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী একটি বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল বাসটি কয়েক ঘণ্টা তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে ভেতরে যাত্রীদের মারধর ও লুটপাট চালায়। এ সময় এক নারী যাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। পরে বাসটিকে রাস্তার পাশে কাত করে ফেলে ডাকাতেরা পালিয়ে যান।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর ডাকাত দল বাসটির নিয়ন্ত্র্রণ নেয়। এ ঘটনায় বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ধর্ষণের শিকার নারীকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাঁকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে বলে থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
যাত্রীদের বরাত দিয়ে মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন জানান, ২৪ থেকে ২৫ জন যাত্রী নিয়ে ঈগল পরিবহনের বাসটি মঙ্গলবার রাতে ঢাকার দিকে রওনা দেয়। বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বিরতি দেয়। রাত দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহনকারী ১০ থেকে ১২ জন তরুণ যাত্রী বাসে ওঠেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা তরুণেরা অস্ত্রের মুখে একে একে যাত্রীদের সবাইকে বেঁধে ফেলেন।
ওসি আরও জানান, ডাকাতেরা সব যাত্রীর কাছ থেকে মুঠোফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুটে নেন। এরপর এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেন। বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখেন তাঁরা। পরে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল–ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের কাছে রাস্তার পাশে বালুর ঢিবিতে বাসটি কাত করে রেখে ডাকাত দলের সদস্যরা চলে যান।
জানতে চাইলে ঈগল পরিবহনের মালিক পাবনার সোলায়মান হক আজ বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর থেকে ২৫ থেকে ৩০ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয়। রাত সাড়ে ১১টায় বাসের সুপারভাইজার রাব্বী তাঁকে জানান, বাসটি সিরাজগঞ্জ পার হচ্ছে। এরপর রাত ৩টা ৯ মিনিটে অপরিচিত একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে রাব্বী জানান, বাসটি ডাকাতের কবলে পড়েছে। কয়েকটি জায়গা থেকে যাত্রীর ছদ্মবেশে ডাকাতেরা বাসে উঠেছিলেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে মধুপুরে চলন্ত বাসে এক ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে পঁচিশমাইল এলাকার রাস্তায় ফেলে দেন আসামিরা। মধুপুর থানা–পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কবরস্থানে দাফন করে। ২৭ আগস্ট নিহত ছাত্রীর বড় ভাই পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে লাশের ছবি দেখে বোনকে শনাক্ত করেন। ৩১ আগস্ট লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন রাতেই তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় ছোঁয়া পরিবহনের চার শ্রমিককে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন টাঈাইল জেলা আদালত।