২০১৩ সালে ময়মনসিংহের ১৩তম উপজেলা হিসেবে যাত্রা শুরু করে তারাকান্দা। নতুন যাত্রা শুরু করা উপজেলা হিসেবে সেবার দিক থেকে নানাভাবে পিছিয়ে ছিল উপজেলাটি। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ছিল না বললেই চলে। অবশেষে ২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনের দেড় বছর পার হলেও এখনো ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যাগুলো চালু হয়নি। কেবল বহির্বিভাগের সেবা চালু রয়েছে।
ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টার সেবা চালু না হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ জনবলসংকট। চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান থেকে শুরু করে সব ধরনের পদে এখনো হয়নি লোক নিয়োগ। পাশাপাশি এখনো পৌঁছেনি জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের আশাবাদ, এসব সংকট পুরোপুরি নিরসন না হলেও দ্রুতই চালু করা হবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ২৪ ঘণ্টার সেবা।
২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে ‘তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই, দুর্ভোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরদিন এ নিয়ে প্রথম আলোতে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশিত হয় সম্পাদকীয়। এসব লেখায় তারাকান্দা উপজেলার মানুষের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরা হয়।
সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ও রোগীদের সঙ্গে। জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বহির্বিভাগের প্রতিদিন গড়ে ৬০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। তবে ওয়ার্ডের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা চালু না হওয়ায় অনেক রোগী কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না। ওই সব রোগী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান সেবার জন্য।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফরাজী মো. মাহবুবুল আলম জানান, কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যার বলা হলেও এখানে শয্যা রয়েছে ৩৯টি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ড চালু করতে হলে যে জনবল প্রয়োজন, তার দুই-তৃতীয়াংশই নেই। চিকিৎসক, নার্সসহ ৭৬টি বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ প্রয়োজন। এর মধ্যে ৪৮টি পদই শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে ১০ জনের জন্য আবেদন করা হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মাত্র চারটি পদ অনুমোদন দিয়েছে। চারজন যোগদান করলেও তাঁরা চারজনই অন্যত্র চলে গেছেন। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টার একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য অন্তত ২২ জন নার্স প্রয়োজন হলেও এখানে ৭টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই পাঁচজনের মধ্যে দুজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন।
জনবলসংকট ছাড়াও রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব। এক্স-রে কক্ষ থাকলেও এখনো আসেনি এক্স-রে যন্ত্র। নেই আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র। তবে বিভিন্ন ধরনের রক্ত পরীক্ষার সরঞ্জাম সম্প্রতি এসেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটির নেই কোনো ব্যবহার।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লোকবল নিয়োগ হলে তারাকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডগুলো চালু হবে।’
তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফরাজী মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সংকট থাকলেও দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আমরা ওয়ার্ড সেবা চালু করব।’