রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের খবর পেয়ে ছেলে জাকির হোসেনকে (৩৮) কল দেন তাঁর মা মোমেনা বেগম। ছেলেকে বাইরে যেতে মানা করেন। কথার একপর্যায়ে হঠাৎ বিকট আওয়াজ পান মা। এরপর আর ছেলের কোনো কথা শুনতে পাননি তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরার আবদুল্লাহপুরে গুলিবিদ্ধ হন জাকির হোসেন। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর ২১ জুলাই রোববার ভোর ৪টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার চর দূর্লভখা গ্রামে। সদর উপজেলার ভীমবাজার এলাকায় ‘কাজী ভিআইপি গার্মেন্টস’ নামের একটি কারখানায় উৎপাদন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
জাকিরের স্বজনেরা বলছেন, কারখানার ফেব্রিকস কিনতে ওই দিন গাজীপুরের কোনাবাড়িতে গিয়েছিলেন জাকির। সেখানে যাওয়ার পর একজন বায়ার তাঁকে মুঠোফোনে কল দিয়ে বলেন, আগের ক্রয়াদেশের কিছু মালামাল তিনি শুক্রবারই নিতে চান। এরপর আন্দোলনের মধ্যেই কোনাবাড়ি থেকে রাজধানীর উত্তরায় কারখানাটির ওয়্যার হাউজে রওনা হন তিনি। পরে আবদুল্লাহপুরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাকিরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক ছিলেন একই কারখানার আরেক কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার সকালে কারখানা এলাকায় গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘মালামাল ডেলিভারি জরুরি হওয়ায় জাকিরকে উত্তরায় যেতে হয়েছিল। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আবদুল্লাহপুরে ওই সময় কোনো আন্দোলনকারী ছিলেন না। শুধু কয়েকজন সাধারণ জনতা অবস্থান করছিলেন। সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন জাকির। ওই সময় হঠাৎ ওপর থেকে একটি গুলি এসে জাকির হোসেনের পিঠে বিদ্ধ হয়। জাকিরের ধারণা হয়েছিল, এটি ওপর থেকে ছোড়া হয়েছিল। এ অবস্থায় পথচারীরা তাঁকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান।’
জাকিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনাতেই তাঁকে দাফন করা হয়েছে। আবদুস সামাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে জাকির বড় ছিলেন। পারিবারিক সচ্ছলতা ফেরাতে এসএসসি পাস করেই গার্মেন্টসে কাজ নেন জাকির। দুই সন্তানের বাবা জাকিরকে হারিয়ে দিশাহারা অবস্থায় আছে পরিবারটি। এ নিয়ে জাকিরের বাবা আবদুস সামাদের আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার ছেলেকে কারা মারল? কার কাছে বিচার দিমু? কিছুই বলার নাই আমার। আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেল।’